পুলিশ কোন ব্যক্তিকে কখন হাতকড়া লাগাতে পারে? আইনি নিয়ম জানুন

পুলিশ কি যে কোন ব্যক্তি কে হাতকড়া লাগাতে পারে? না কি পারে না? কোন ব্যাক্তি কে কোন কারণে হাতকড়া লাগানো হয়? (Rights Against being Handcuffed in Bengali) আসুন জেনে নিন হাতকড়া নিয়ে কি কি আইনি নিয়ম কানুন রয়েছে এবং এই বিষয়ে কোর্ট কি আদেশ দিয়ে থাকেন।

আমরা অনেক সময় দেখি যে, কোন অপরাধীকে গ্রেফতার করার সময় পুলিশ আদালতে হাজির করার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় সেই ব্যক্তির হাতে হাতকড়া লাগিয়ে থাকেন।

আর কোন বিচারালয় এ এটা খুবই সাধারন বিষয় যে, পুলিশ কোনো অভিযুক্তকে যখন আদালতে নিয়ে যাবেন আবার থানা অথবা জেলে ফেরত আনবেন, তখন সেই ব্যক্তির হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশ কোন ব্যক্তিকে কখন হাতকড়া লাগাতে পারে? আইনি নিয়ম জানুন
পুলিশ কোন ব্যক্তিকে কখন হাতকড়া লাগাতে পারে? আইনি নিয়ম জানুন

এটা জানা খুবই প্রয়োজন যে, আসলে হাতকড়া লাগানোর অধিকার পুলিশের কখন থাকবে ? কোন পরিস্থিতি এমন হতে পারে, যেখানে পুলিশ কোন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করার সময়, আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়, হাতকড়া লাগাতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বলেছে যে, হাতকড়া লাগানো কে অসাংবিধানিক বলেছে অনেক আগেই।

কোন ব্যক্তিকে কিভাবে গ্রেপ্তার করা যাবে, এর প্রক্রিয়া দণ্ডবিধান সংহিতা 1973 ক্রিমিনাল প্রসিডিউর কোড (Criminal Procedure Code) 1973 সিআরপিসি (CrPC) এর ধারা 46 এ দেওয়া হয়েছে, এই ধারাতে নিচে দেওয়া চারটি কথা বলা হয়েছে:-

১) গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে পুলিশ আধিকারি অথবা অন্য কেউ, যিনি কিনা গ্রেপ্তার করছেন আর যে ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হচ্ছে, সেই ব্যক্তির শরীরে হাত দিতে পারবেন অথবা বন্ধ করতে পারবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সেই ব্যাক্তি কথা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে অথবা কাজের মধ্যে দিয়ে নিজেকে অভিরক্ষাতে সমর্পিত না করে দিচ্ছেন।

কিন্তু যেখানে কোনো স্ত্রী অথবা কোন মহিলাকে গ্রেফতার করা হবে, সেখানে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন এই বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে বিপরীত হতে পারে। গ্রেফতারের মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদের পর আদালতে সমর্পণ করে দেওয়া হবে। আর যতক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতিতে অন্যথা না হয়ে থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত পুলিশ অধিকারী সেই মহিলাকে গ্রেফতার করার জন্য তার শরীর কোনোভাবেই ছুঁইতে পারবেন না।

২) যদি এমন ব্যক্তি তার নিজের গ্রেফতার হওয়া থেকে প্রতিরোধ করে থাকেন অথবা পালাবার চেষ্টা করেন অথবা বলতে গেলে গ্রেপ্তার হওয়া থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন বলে এমনটা মনে হয়, তখন এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ অধিকারী অথবা অন্য ব্যক্তি গ্রেফতার করার জন্য যে সমস্ত প্রয়োজনীয় বিধান গুলি রয়েছে সে গুলি সব গুলি কাজে লাগাতে পারেন। বলা যেতে পারে সেই ব্যক্তিকে হাতকড়া লাগিয়ে আদালতে হাজির করানো যেতে পারে বা জেলে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

৩) এই ধারার অন্তর্গত কিছু কথা, এমন ধরনের ব্যক্তিকে যে ব্যক্তির উপরে মৃত্যু অথবা আজীবন কারাবাস এর থেকে দণ্ডনীয় অপরাধের অভিযোগ নেই এমন পরিস্থিতিতে কিন্তু হাতকড়া লাগানো নাও যেতে পারে।

৪) অসাধারণ পরিস্থিতি ছাড়া কোন মহিলা সূর্যাস্তের পর অথবা সূর্যোদয়ের আগে গ্রেফতার হতে পারবেন না, অথবা তাকে গ্রেফতার করা যাবে না কোন ভাবেই।

আর যেখানে এমন অসাধারণ পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকে, সেখানে মহিলা পুলিশ অধিকারী লিখিতভাবে রিপোর্ট করে প্রথম শ্রেণীর বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট কে আগে থেকেই জানিয়ে রাখতে হবে। যার স্থানীয় অধিকারীতার ভিতর অপরাধ করা হয়েছে অথবা গ্রেপ্তার করা হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্ট কোন ব্যক্তিকে হাতকড়া লাগানো বিষয়টিকে অসাংবিধানিক বলেছে। সুনীল বত্রা বনাম দিল্লি প্রশাসন 1978 4 এস এস সি 409 এর কেস এ সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাবে বলেছে যে, পুলিশ কোন ব্যক্তিকে হাতকড়া লাগাতে পারবেন না।

আর যদি সেই পুলিশ এমনটা করে থাকেন তো সেটা সম্পূর্ণ রূপে অসংবিধানিক হবে। আর এটি ভারতীয় সংবিধানের অনুচ্ছেদ 21 আর অনুচ্ছেদ 22 এর নিয়ম কে লংঘন করা হবে।

অনুচ্ছেদ 22 এ কোন ব্যক্তিকে ইচ্ছেমতো পদ্ধতিতে গ্রেফতার করার বিরুদ্ধে আইন রয়েছে অথবা কোন ব্যক্তিকে ইচ্ছামত গ্রেপ্তার করা যাবে না সে বিষয়ে অনুচ্ছেদ 22 লেখা রয়েছে। যে কোন ব্যক্তিকে ইচ্ছেমতো পদ্ধতিতে গ্রেফতার করা যাবে না।

যখন অনুচ্ছেদ 21 অনুসারে প্রান-আর দৈহিক স্বাধীনতার সম্বন্ধে বলা হয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে তার দৈহিক স্বাধীনতার উপরে কোনো রকম বাধা প্রদান করা যাবে না।

এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট অঞ্জনি কুমার সিনহা বনাম স্টেট অফ বিহার 1992 এর কেস এ বলা হয়েছে যে, পুলিশ কোন ব্যক্তিকে অসীমিত ক্ষমতা ব্যবহার করার মধ্যে দিয়ে হাতকড়া লাগাতে পারবেন না।

সুপ্রিম কোর্ট আগে মামলাতে বলেছে যে, যদি পরিস্থিতি এমন হয় যেখানে বন্দী অপরাধীর আচরণ অথবা চরিত্র এই ধরনের হয়ে থাকে, যেখানে সেই ব্যক্তিকে হাতকড়া লাগানোর যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে।

আর যেমনটা মনে করা হয় যে, সেই অভিযুক্ত ব্যক্তি পালিয়ে যেতে পারে অথবা জনসমক্ষে শান্তি ভঙ্গ করতে পারে বা কোনরকম অন্যায়-অত্যাচার জনিত কাজকর্ম করতে পারে, তো এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ অভিযুক্ত ব্যক্তির হাতে হাতকড়া লাগাতে পারবেন।

যদি কোন কারণ ছাড়া কোন ব্যক্তির হাতে হাতকড়া লাগানো হয় সে ক্ষেত্রে কিন্তু সেই ব্যক্তির অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া হবে, আর যেটা কখনোই উচিত নয় আইন অনুসারে।

এছাড়াও সুপ্রিম কোর্ট অন্যান্য কেস এ অনেকবার বলেছে যে, কোনরকম যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া কোন ব্যক্তিকে হাতকড়া লাগানো অসংবিধানিক হয়ে থাকে।

আর যদি পুলিশ কোন ব্যক্তির হাতে হাতকড়া লাগাতে চান তাহলে সেই পুলিশ অধিকারী কে যুক্তিযুক্ত কারণ বলার মধ্যে দিয়ে সম্বন্ধিত বিচারালয় থেকে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে।

যদি কোন ব্যক্তি অপরাধ করে থাকেন আর নিজের ইচ্ছায় পুলিশের সাথে কোনরকম ঝামেলা না করে জেলে অথবা থানায় যেতে চান তাহলে সেক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির হাতে কখনোই হাতকড়া লাগানো উচিত নয়, কেননা তার স্বাধীনতা আর তার অধিকারের উপরে আইন কখনোই জোরপূর্বক কোন কিছু করতে পারে না।

তবে যদি পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পালানোর চেষ্টা করে থাকে সেই অভিযুক্ত, সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সেই ব্যক্তির হাতে হাতকড়া লাগানো যেতে পারে অনায়াসেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top