ট্রাস্ট কি? কিভাবে ট্রাস্ট আইনত ভাবে বানানো যায়? আইনি নিয়মাবলী

Indian Trusts Act and Benefits in Bengali: ট্রাস্ট কি? কিভাবে ট্রাস্ট আইনত ভাবে বানানো যায়? ভারতে ট্রাস্ট সোসাইটির আইনি নিয়ম কানুন কি? আসুন জেনে নিন ট্রাস্ট ও ট্রাস্টি সম্পর্কে বিস্তারিত আইনি নিয়মাবলী। ভারতে ট্রাস্ট কিভাবে বানাবেন? জানুন কোন ব্যক্তিকে ট্রাস্ট এর মাধ্যমে কোন কাজ সম্পন্ন করা যায়।

এমন একটা দিন ছিল, যেখানে শুধুমাত্র বিশ্বাসের উপর নির্ভর করেই জমি, জায়গা কেনা বেচা করা হতো এবং মানুষের মধ্যে কথার দাম, ভরসা সবকিছু অটুট ছিলো। তবে দিনবদলের সাথে সাথে মানুষের চিন্তা ভাবনা এবং মানুষের উপরে বিশ্বাস ও ভরসা কমতে শুরু করেছে। আর তাইতো কাগজ পত্রের এবং প্রমান পত্রের প্রয়োজন পড়ে প্রতিনিয়ত।

ট্রাস্ট আসলে কি?

ধরুন আপনি কোন ব্যক্তির উপরে এতটাই বিশ্বাস করছেন যে, আপনি নিশ্চিত জানেন যে সে কাজটি অবশ্যই হবে এবং সেই বিশ্বাস যে ব্যক্তির উপর করছেন সেই ব্যক্তির একটি বিশেষ দায়িত্ব থাকে এই বিশ্বাসের উপর। কেননা তাতে একটা সম্পূর্ণ অধিকার থেকে যায় যে, কোন মানুষ তার উপরে ভরশা অথবা বিশ্বাস করে কোন কাজ করছেন।

ট্রাস্ট কি? কিভাবে ট্রাস্ট আইনত ভাবে বানানো যায়? আইনি নিয়মাবলী
ট্রাস্ট কি? কিভাবে ট্রাস্ট আইনত ভাবে বানানো যায়? আইনি নিয়মাবলী

অনেক সময় দেখা যায় সম্পত্তির ক্ষেত্রে বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে কোন রকম কাগজপত্র ছাড়াই সম্পত্তি লেনদেন অদল বদল এছাড়া আরো অন্যান্য কাজকর্ম হয়ে থাকে। যার মধ্যে দিয়ে দুই তরফের ব্যক্তির লাভ নির্ধারণ হয়ে যায়। যা নিয়েও কোনোরকম সংশয় থাকে না।

বিশ্বাস অধিনিয়ম অনুসারে 1882 এবং ধারা 3 অনুযায়ী কোন ব্যক্তির সম্পত্তি বিষয়ে আর একজন ব্যক্তির উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকাটা এই বিশ্বাসের একটি সম্পূর্ণ অন্যতম উদাহরণ। এর মধ্যে দিয়ে দুই ব্যক্তির লাভ নির্ভর করে এবং ক্ষতি হলে সেটাও নির্ভর করে।

বাঙ্কে চেক বাউন্স হলে কি করবেন? জানুন আপনার আইনি অধিকার

ট্রাস্ট এর প্রয়োজনীয়তা:

মানুষের বাঁচার ক্ষেত্রে বিশ্বাস এর প্রয়োজনীয়তা কতখানি তা নতুন করে বলার কোন প্রয়োজনই নেই। তবে একটি ট্রাস্ট এজেন্সি বিভিন্ন রকম শর্ত ও নিয়মের ওপর নির্ভর করে ব্যাক্তিদের বিশ্বাস করার মতো বিশ্বাস যোগ্য স্থান তৈরি করে থাকে।

এ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির সম্পত্তি রাখার জন্য অথবা হস্তান্তর করার জন্য উপযুক্ত পরিমাণ বিশ্বাস থাকাটা বাঞ্ছনীয়। তাছাড়া ট্রাস্টের বৈধ উদ্দেশ্য থাকা প্রয়োজন অনেক খানি।

১) ট্রাস্ট এর ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির সম্পত্তির মধ্যে আর এক জন ব্যক্তির সম্পত্তি কখনোই মিলিয়ে ফেলা অথবা গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।

২) ট্রাস্ট এমন একটি জিনিস যেটা লংঘন হলে আপনি সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতকতার কেস করতে পারেন।

৩) তাছাড়া ট্রাস্টের উপর কোনরকম জালিয়াতি হওয়া একেবারেই বাঞ্ছনীয় নয়।

৪) ট্রাস্ট এর ক্ষেত্রে কোন রকম অবৈধ কাজ করা কখনোই সম্ভব নয়, যাতে মানুষের বিশ্বাস একেবারে নষ্ট হয়ে যায়।

৫) আবার যেখানে একটি ট্রাস্ট দুটো কাজের উদ্দেশ্যে বানানো হয়ে থাকে, প্রথমত একটি বৈধ  এবং দ্বিতীয় টি অবৈধ, এই দুটি কে যে কখনোই আলাদা করা সম্ভব নয় এই ট্রাস্টের ক্ষেত্রে।

ট্রাস্ট / বিশ্বাস এর নির্মাণ:

ট্রাস্ট দু রকম ভাবে তৈরি করা যেতে পারে। একটি আইনিভাবে ও আরেকটি বে-আইনিভাবে, বে-আইনি দস্তাবেজ এর মাধ্যমে।

একটি অচল সম্পত্তি সম্পর্কে মুখ্য বিশ্বাস কখনোই গড়ে উঠতে পারে না। কিন্তু দস্তাবেজ এর মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করানো অবশ্যই প্রয়োজন। একটি সচল সম্পত্তির বিশ্বাস এক্ষেত্রে কোনো রকম দস্তাবেজ এর মাধ্যমে খুবই সহজ ভাবে করতে পারবেন।

যে ব্যক্তি ট্রাস্ট বানিয়ে থাকেন সেই ব্যক্তিকে “সেটলার” বলা হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি ট্রাস্টে সম্পত্তি হস্তান্তর করে থাকেন তাকে “ট্রাস্টি” বলা হয়। আর যে ব্যক্তিকে এই সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়ে থাকে সেই ব্যক্তিকে বলা হয় “Cestui Que ট্রাস্ট” বলা হয়। অথবা “লাভার্থি” ও বলা হয়ে থাকে।

হিন্দু মহিলাদের সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইন ও নিয়ম এবং অধিকার

ট্রাস্ট অথবা বিশ্বাসের কাগজপত্র:

অচল সম্পত্তি সম্পর্কিত একটি ট্রাস্ট কে এক দস্তাবেজ দ্বারা বানানো অবশ্যই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সেগুলি হল:-

১) ট্রাস্ট বানানো ব্যক্তিকে অবশ্যই বিভিন্ন বিষয়ে কিছু ছাড় দিতে হবে অথবা ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।

২) ট্রাস্টের উদ্দেশ্য।

৩) লাভার্থী।

৪) ট্রাস্টের সম্পত্তি এবং সেই সম্পত্তি হস্তান্তর।

বিশ্বাসের ঘোষণা: 

ট্রাস্টের লেখক দ্বারা ঘোষণা করা হবে যে, সেই ব্যক্তি সম্পত্তির মালিক হবেন, যে ব্যাক্তি মালিক হিসেবে নয় নিজের সাথে সাথে আরো অন্যান্য ব্যাক্তিদের লাভ এর বিষয়ে সচেতন থাকবেন।

সে ক্ষেত্রে সম্পত্তি হস্তান্তর কোনভাবেই বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু এর ঘোষণা ট্রাস্টের মালিক দ্বারা হয়ে থাকে। আর এই ব্যক্তিকে একাকী এই ট্রাস্টি হতে হবে। তাছাড়া এই ঘোষণা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অবশ্যই নির্ধারিত করতে হবে।

ট্রাস্ট নামা:

একটি ট্রাস্ট বিশ্বাস নামা দস্তাবেজ অনুযায়ী বানানো যেতে পারে, সেক্ষেত্রে অধিনিয়ম অনুযায়ী ধারা 6 অনুসারে উল্লেখিত সমস্ত রকম শর্ত গুলি ভালোভাবে জেনে নিয়ে সেগুলি পালন করতে হবে। এছাড়া এমন বিল এর কোন রকম রেজিস্ট্রেশন এর প্রয়োজন পড়বে না।

কোন ভাড়াটিয়াকে আইনি ভাবে ঘর থেকে তুলে দেওয়ার নিয়ম

কে একটি ট্রাস্ট বানাতে পারবেন?

একটি ট্রাস্ট যে কোন ব্যক্তি সক্ষম বিচারালয়ের অধিকার হিসেবে যে কোন সম্পত্তির সম্মান রক্ষার্থে বানানো যেতে পারে। যে সম্পত্তি হস্তান্তর এবং ট্রাস্টের মালিক নিজের ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ করে থাকতে পারবেন সেই সম্পত্তির উপর।

একটি ট্রাস্টের প্রকার:

একটি ট্রাস্ট নিজস্ব এবং সার্বজনীক হতে পারে। যখন কোন ট্রাস্ট আইন হিসাব অনুসারে কোন ব্যক্তির সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে বিভিন্ন রকম লাভ দিয়ে থাকে। আর যা সম্পত্তি রাখার জন্য সক্ষম সেটাই হলো নিজস্ব ট্রাস্ট।

যখন ট্রাস্ট এর উদ্দেশ্য জনতা অথবা জনতার কোনরকম বর্গের মানুষজনের জন্য লাভ দায়ক হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে সেটা সার্বজনীক ট্রাস্ট হয়ে থাকে।

কোন ব্যক্তি “ট্রাস্টি” হতে পারবেন?

এখানে একটি কথা বলে রাখা ভালো যে, যে কোন ব্যক্তি ট্রাস্টি হতে পারবেন অনায়াসেই। সেক্ষেত্রে সম্পত্তি রাখার জন্য সক্ষম থাকতে হবে এবং অবশ্যই বিশ্বাস যোগ্য হতে হবে। বিপরীতে ব্যক্তিকে অবশ্যই বিশ্বাস গ্রহণ করতে হবে। সমস্ত রকম আইনি শর্ত মেনে নিয়ে দস্তাবেজ এর মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি ট্রাস্টি হতে পারবেন।

একটি ট্রাস্ট সম্পত্তি হস্তান্তর এবং রক্ষণা- বেক্ষণের জন্য সক্ষম হয়ে থাকে, যেটা সাধারণ মানুষের জন্য খুবই লাভ দায়ক। যা কিনা নিজস্ব হতে পারে আবার সার্বজনীন হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top