কর্মচারীদের আইনি অধিকার কি কি জানুন! খুব জরুরি জেনে রাখা

Legal Rights of Employees in Bengali: প্রতিটি কর্মচারীদের আইনি অধিকার রয়েছে! আপনি কি জানেন? না জানলে এখনি জেনে নিন কর্মচারীদের আইনি অধিকার কি কি? কর্মচারী কোন কোন ভাবে আইনি অধিকার পেয়ে থাকে। অবশ্যই জেনে নেবেন।

সারা ভারতে বিভিন্ন রকমের কর্মচারীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। প্রতিটি মানুষ কোন না কোন কাজের সাথে যুক্ত রয়েছেন। সেই কাজের উপর ভিত্তি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে।

তবে সময় ক্ষেত্রে অনেক বিষয় এর পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারীদের বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাছাড়া ভারতের বিভিন্ন রকমের আইন-কানুন রয়েছে, বিশেষ করে কর্মচারীদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য বিভিন্ন রকমের আইন বানানো হয়েছে।

Legal Rights of Employees in Bengali - কর্মচারীদের আইনি অধিকার
Legal Rights of Employees in Bengali – কর্মচারীদের আইনি অধিকার

যে কোন সংগঠনকে বিকশিত করার জন্য একটি সুন্দর এবং বিকশিত কার্যালয় অবশ্যই প্রয়োজন, তা না হলে সেখানে কর্মচারীরা কোনভাবেই কোন মুক্তভাবে কাজ করতে পারবেন না।

ভারতের এ আইনের মধ্যে কর্মচারীদের জন্য কিছু অধিকার, “রাইট টু লিভ” থেকে শুরু করে “কৃতজ্ঞতা প্রাপ্ত” করা পর্যন্ত আইন রয়েছে। যার সম্বন্ধে কর্মচারীদের অবশ্যই জেনে রাখাটা প্রয়োজন।

নিজের স্বামী বা স্ত্রী কে ডিভোর্স কিভাবে দেবেন? আইনি পদ্ধতি জানুন

যে সমস্ত বিষয়গুলি কর্মচারীদের বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে সেগুলি হল:- 

লিখিত নিযুক্তি পত্র:

যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে কোন কর্মচারী যদি কাজ করা শুরু করেন, তাহলে কাজ শুরু করার আগে একটি লিখিত নিযুক্তি পত্র এবং রোজগারের যে টাকাটা আপনাকে তারা প্রদান করবেন সেটা অবশ্যই উল্লেখিত ভাবে থাকতে হবে সেই নিযুক্তি পত্রে। এটা অবশ্যই প্রয়োজন, আর এটা কিন্তু একটা আইনি দস্তাবেজ অথবা কাগজপত্র বলতে পারেন।

সমস্ত রকম বোঝাবুঝি এবং আরো অন্যান্য নিয়ম অনুসারে বিভিন্ন রকমের শর্তগুলি মেনে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে এটি নির্ধারিত করা হয়। এই চুক্তিপত্র কর্মচারী এবং যারা কর্মচারী যুক্ত করবেন তাদের অধিকার এর সম্পর্কে একটি ধারণা দিয়ে থাকে।

যখন আপনি সমস্ত কিছু বোঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে সই করবেন সেই চুক্তিপত্রে অথবা নিযুক্তি পত্রে, সেক্ষেত্রে কিন্তু দুই পক্ষের একটি সুরক্ষা ভাবনা প্রদান করা হয়ে যায় আপনা থেকেই। দুই পক্ষের সুরক্ষা এবং সংরক্ষণ দুটো দিক নিশ্চিত হয়ে যায়।

এছাড়া এই নিযুক্তি পত্র ভবিষ্যতে কোন রকম সমস্যা তৈরি হলে মালিক এবং কর্মচারীর মধ্যে, তাহলে এই নিযুক্তি পত্র অনেকখানি সহযোগিতা করতে পারে সেই বিবাদ মিটিয়ে ফেলার জন্য।

এছাড়া এই নিযুক্তি পত্রে সই করার আগে সমস্ত রকম শর্ত গুলি দেখে নিয়ে কোনো প্রফেশনাল ব্যক্তির কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। তবে যে বিষয়গুলি আপনাকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে সেগুলি নিচে দেওয়া হল:

১) কোনরকম ক্ষতির, ক্ষতিপূরণ অথবা ভরপাই।

২) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং দায়িত্ববোধ।

৩) যে কাজে নিযুক্ত হবেন সেই কাজের পদের নাম।

৪) আপনি যেখানেই কাজ করেন না কেন, সেখানকার যদি কোনরকম গোপনীয় তথ্য থাকে সেগুলো কোনোভাবেই বাইরে প্রকাশ না করা।

৫) সমস্ত রকম সমস্যা অথবা বিভাগ এর সমাধান বিধি।

কর্মচারীদের ছুটি নেওয়ার অধিকার:

কর্ম ক্ষেত্রে প্রতিটি মানুষের ছুটির প্রয়োজন হয় তবে বেশকিছু কারণবশত কোন কর্মচারী ছুটি নিতে পারবেন, কর্মক্ষেত্র থেকে যে সমস্ত কারণের জন্য একটি কর্মচারীর ছুটি নিতে পারবেন সেগুলি হল:-

১) জরুরী বিষয়ে ছুটি: এমার্জেন্সি হিসেবে পরিবারের ক্ষেত্রে দেখভাল অথবা অন্য কোন কারণে হঠাৎ করে যদি ছুটির প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে বছরে কিছু কারণ অনুযায়ী কর্মচারীদের ছুটি দেওয়া যেতে পারে।

২) অসুস্থ হওয়া: কর্মচারীদের মধ্যে যদি কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে সে ক্ষেত্রে কিছুদিনের ছুটি অবশ্যই তাকে দেওয়া প্রয়োজন এবং এতে আইনত অধিকার রয়েছে সেই কর্মচারীর।

৩) কর্মচারী জীবনের সাথে সম্পর্কিত কোনো জরুরি কাজ মেটানো উদ্দেশ্যে ছুটি প্রাপ্ত করতে পারেন।

৪) এছাড়া নিজের দরকারি কাজ, পারিবারিক সমস্যা, সমস্ত ক্ষেত্রে ছুটি নেওয়াতে কর্মচারীর আইনি অধিকার রয়েছে।

বাবার সম্পত্তিতে ছেলে মেয়েদের আইনি অধিকার কি? জেনে নিন

কর্মস্থলে যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষা:

কর্ম ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কাজ করে থাকেন, সেক্ষেত্রে তাদের সুরক্ষা প্রদান করা সেই কর্ম স্থলের মালিক এবং সেখানকার স্টাফদের প্রথম দায়িত্ব ও কর্তব্য বলতে পারেন। সেখানে কোনো রকম যৌন হয়রানি যেন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখাটা অবশ্যই জরুরি।

সেক্ষেত্রে প্রতিরোধ নিষেধ এবং নিবারণ হিসেবে অধিনিয়ম 2013 তে মহিলাদের যৌন হয়রানি সম্পর্কিত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে সেই মহিলা কর্মচারীর।

সমস্ত কর্মচারীর মধ্যে পরিষ্কার ভাবে জানানো জরুরী যে, কর্মক্ষেত্রে কোনরকম এমন পরিস্থিতি তৈরি না করা। না হলে তার বিরুদ্ধে আইনি কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর জন্য একটি আন্তরিক অভিযোগ সমিতি গঠন করা অবশ্যই জরুরি।

যেখানে একজন বয়স জ্যেষ্ঠ মহিলা এবং তার সাথে আরো অন্যান্য কিছু সদস্য হিসাবে কর্মচারীকে শামিল করতে হবে। যারা এই বিষয়টাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভাবে দায়িত্ব সহকারে দেখবেন।

কৃতজ্ঞতা প্রাপ্ত করার অধিকার:

যে কোনো ভালো কাজের জন্য কোন মানুষ কাউকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে থাকে এবং এই কর্মচারীদের জন্য সেটা কিন্তু একেবারে অন্যথা নয়। আর সেই কারণে একটি কর্মচারী যখন টানা ৫ বছর সেই কর্ম ক্ষেত্রে দায়িত্ব সহকারে এবং কর্তব্য অনুযায়ী কাজ করে থাকেন, তাহলে তাকে কৃতজ্ঞতা জানানো খুবই জরুরী, সেই কর্ম ক্ষেত্রের তরফ থেকে।

এছাড়া ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী পেনশন পাওয়ার অধিকার সেই কর্মচারীর রোজগার সম্পন্ন হওয়ার কৃতজ্ঞতা অনুসারে মৃত্যুর পর কিছু টাকা প্রাপ্ত করার অধিকার সেই কর্মচারীর পরিবারের।

এছাড়া এমনও অনেক কর্মক্ষেত্র রয়েছে যেখানে সেই কর্মচারী  কাজ করার পরও মৃত্যুর পরে সেই পরিবারকে সেই কর্মক্ষেত্র থেকে প্রতি মাসে বেতন হিসেবে দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে থাকে সেই কর্মচারীকে।

এছাড়া এই অধিকার সামাজিক সুরক্ষা প্রদান করে থাকে, আর একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বলে অনেকেই মনে করেন। তাছাড়া সমাজসেবামূলক কাজের মধ্যে এটিও পড়ে।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে অসাবধানতার আইন নিয়ম এবং তার শাস্তি

সার্বজনীন অবকাশ অথবা পাবলিক হলিডে এর জন্য কর্মচারীর অধিকার:

ভারতে তিনটি সার্বজনীন অবকাশ অথবা পাবলিক হলিডে, গণতন্ত্র দিবস 26 শে জানুয়ারি, স্বতন্ত্রতা দিবস অথবা স্বাধীনতা দিবস 15 ই আগস্ট, গান্ধী জয়ন্তী 2 রা অক্টোবর, পালন করা হয়ে থাকে। কর্ম ক্ষেত্রে কাজের চাপ থাকা সত্বেও এই তিনটে দিন কর্মচারীদের ছুটি দেওয়া অনিবার্য হিসাবে গণ্য করা হয়।

পুরুষ কর্মচারী এবং মহিলা কর্মচারীদের জন্য সমান বেতন:

যদি কাজ একই রকম হয়ে থাকে, তাহলে কাজের পরিমাণ ও যদি দুজন কর্মচারী একই রকম করে থাকেন অর্থাৎ পুরুষ কর্মচারী এবং মহিলা কর্মচারী, তাহলে সেক্ষেত্রে বেতনের পরিমাণ টা সম্পূর্ণরূপে একই হওয়া প্রয়োজন। সংবিধান অনুচ্ছেদ 39 D অনুসারে পুরুষ আর মহিলা কর্মচারীর জন্য সমান কাজের ক্ষেত্রে সমান বেতন অনিবার্য করা হয়েছে।

সমান সমান বেতন পাওয়ার সাথে সাথে আরো অন্যান্য যে লাভ গুলি রয়েছে সে গুলোও কিন্তু সামিল হবে। এই ক্ষেত্রে সমান পারিশ্রমিক অধিনিয়ম 1976 অনুসারে নিযুক্ত কারীকে সমান কাজের জন্য সমান বেতন দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়ে থাকে এই আইনে।

পরীক্ষার ক্ষেত্রে কর্মচারীদের অধিকার:

সাধারণত কর্মচারীদের জন্য পরীক্ষার জন্য ছয় মাসের ছুটি দেওয়ার আইন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যে ব্যাক্তি কর্মচারী নিযুক্ত করছেন, তিনি এই ছুটিকে তিন মাস পর্যন্ত বাড়াতে পারেন। পরীক্ষা পর্যন্ত দুই বছরের বেশি ছুটি কখনোই দেওয়া যাবে না।

বীমা করার অধিকার:

রোজগার এর উপর ভিত্তি করে অনেকেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করেন। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে সেই টাকা ভবিষ্যতে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে রাখেন। তাই কর্ম ক্ষেত্রে নিযুক্তির পাশাপাশি বীমা করাতে পারেন।

তাছাড়া ভবিষ্যতে যদি সেই কর্মক্ষেত্র থেকে কোন ভাবে কাজ ছাড়া হয়ে থাকেন সেই কর্মচারী, তাহলে রাজ্য বীমা অধিনিয়ম 1948 অনুসারে বীমা করার অধিকার রয়েছে সমস্ত কর্মচারীর।

নিজের নাম পরিবর্তন করার আইনি নিয়ম ও পদ্ধতি

মাতৃত্ব / পিতৃত্ব লাভ:

এক্ষেত্রে কিন্তু প্রত্যেক মহিলা কর্মচারীকে 26 সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটির অধিকার রয়েছে অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় কোনভাবেই কর্ম ক্ষেত্রে এসে কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা মহিলাদের জন্য। সে ক্ষেত্রে এই ছুটিটা অনিবার্য করা হয়েছে। আর এই ছুটিকে মাতৃত্ব লাভের জন্য বিশেষ রূপে আলাদা ভাবে ধরা হয়।

বাচ্চা জন্মানোর আট সপ্তাহ অর্থাৎ দুই মাস পর্যন্ত এই ছুটি থাকতে পারে। আইন অনুসারে যদি কোন মহিলা বাচ্চা দত্তক নিয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে সেই বাচ্চার বয়স যদি তিন মাসের কম হয়ে থাকে, তাহলে 12 সপ্তাহ পর্যন্ত ছুটির অধিকার অথবা আইন রয়েছে।

এই সমস্ত বিষয় গুলির উপরে যদি কোনো ভাবে হস্তক্ষেপ করে থাকেন সেই কর্মক্ষেত্রের মালিক এবং অন্যান্য সদস্যগণ তাহলে কিন্তু আইন হিসাব অনুসারে জরিমানা এবং জেল, তার সাথে মামলা দায়ের হতে পারে তাদের বিরুদ্ধে।

তাই কর্মচারীদের নিযুক্ত করার আগে নিযুক্তি পত্র তে পরিষ্কার ভাবে তাদের কে জানিয়ে দেওয়া এবং এই সমস্ত অধিকার গুলি থেকে তাদেরকে কোন ভাবেই বঞ্চিত না করা। যার ফলে ভবিষ্যতে আইনি ঝামেলায় কখনোই পড়তে হবে না কর্মক্ষেত্রের মালিক কে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top