মহালয়ার পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় এই দুর্গোৎসবের আনন্দ। তবে একটার পর একটা দিন যেতে যেতে বিজয়া দশমী চলেই আসে। একরাশ হতাশা, কান্না এবং মনমরা নিয়ে দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে হয়। তাছাড়া বিজয়া দশমী এবং দশহারা একই দিনে পড়ে। আর এই দিনে মহিষাসুর বধ করেছিলেন দেবী দুর্গা, দুর্গতিনাশিনী।
আবার আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের দশমী তিথিতে রাবণ কে বধ করেছিলেন শ্রী রামচন্দ্র। তাই এই দিনটি পালিত হয় দশহারা হিসেবে সকল হিন্দুদের কাছে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের বিজয়া দশমীর গুরুত্ব এবং মাহাত্ম্য অনেকখানি। দেবী দুর্গাকে বরণ করে বিদায় জানানো হয়। সকলে মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়।
দেবীকে মন্ডপ থেকে এবং মন্দির থেকে বাইরে বের করে আনা হয়, বিসর্জনে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আবার ভারতের অন্যান্য রাজ্যে এই একই দিনে দশহারা পালিত হয় খুবই ধুমধাম ভাবে কেননা এই দিন রাবণ বধ করেছিলেন শ্রী রামচন্দ্র। তাই এই দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ সকলের কাছে।
তবে যাই হোক না কেন, শাস্ত্রমতে বিজয়া দশমীর দিনে কিছু নিয়মকানুন পালন করলে এবং উপায় উপাচার করলে অর্থের অভাব দূর হয়, এমনকি সংসারে উন্নতির পথ প্রশস্ত হয়। কি সেই পন্থা গুলি নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করবে সকলেরই, তাই তো!
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, সেই উপাচার গুলি সম্পর্কে:
১) ধারালো অস্ত্র-শস্ত্র পরিষ্কার:
প্রতিটি গৃহস্থ বাড়িতে বিভিন্ন রকমের কাজে আসে এমন অস্ত্রশস্ত্র রাখা হয়, যেমন ধরুন দা, বটি, কুড়ুল এই ধরনের আরো অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র। সেগুলি দশমীর দিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তার পূজা করতে হয়।
দেবী দুর্গার দশটি হাতে দশ রকমের অস্ত্র থাকে। সেই কারণে সমস্ত বাঙালি পরিবারের সদস্যদের উচিত বিজয়া দশমীর দিন সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে তার পুজো করা।
২) সূর্যমুখীর বীজ:
সূর্যমুখী ফুল নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন, তবে এই ফুল পেকে গিয়ে এই ফুলের মধ্যে অনেক বীজ উৎপন্ন হয় তা থেকে তেল উৎপন্ন হয়।
তবে এই বিজয়া দশমীর সাথে সূর্যমুখীর কি সম্পর্ক ? সূর্যমুখীর বীজ পুজো করে তারপরে সেই বীজ যে লকারে আপনি টাকা-পয়সা, সোনার গয়না রাখেন সেখানে রেখে দিন।
এমন করলে অর্থের অভাব দূর হয় এবং সংসারে উন্নতি ঘটে, শাস্ত্র অনুসারে জানা যায়।
৩) মামলার নথিপত্র:
এমন অনেক পরিবার আছে, যে পরিবারের কোনো না কোনো কারণে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। সেই মামলা মোকদ্দমার নথিপত্র গুলি অথবা কাগজপত্র গুলি ঠাকুরঘরে প্রতিমার নিচে রেখে দিন এই বিজয়া দশমীর দিনে।
তারপর এ থেকে আপনি অনেক সুফল লাভ করবেন। সেই মামলায় জয়লাভ করতে পারবেন আপনি।
বিজয়া দশমীতে এই নিয়মগুলি মানলে মায়ের কৃপা সর্বদাই থাকবে আপনার উপর
৪) জাফরানের রং:
জীবনে উন্নতি সাধনের জন্য অনেকেই চাকরির খোঁজ করে থাকেন এবং চাকরি যদি করে থাকেন সেক্ষেত্রে উন্নতির জন্য অনেকেই ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন।
বিজয়া দশমীর দিনে কাঁচা সুতোকে জাফরানের রং দিয়ে রাঙিয়ে তুলুন, এর ফলে আপনি অনেক সুফল পাবেন। তারপর নারায়ন মন্ত্র ১০৮ বার জপ করুন।
জপ করা শেষ হওয়ার পরে সেই সুতো নিজের কাছেই রেখে দিন। এর ফলে আপনার সকল মনের ইচ্ছা পূরণ হবে খুব শীঘ্রই।
৫) দান – পূণ্য:
সবার জন্য দান ধ্যান করা খুবই পুণ্যের কাজ। তবে বিজয়া দশমীর দিনে মেয়েদের উদ্দেশ্যে যদি দান ধ্যান পূণ্য কাজ করা যায় তাহলে দুর্গার বিশেষ আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব হয়।
এর ফলে ধন সম্পদ বৃদ্ধি হয় এবং জীবনে অনেকখানি সাফল্য অর্জন করা যায়। কারণ প্রতিটি মেয়ের মধ্যে দুর্গার রূপ রয়েছে, বলা যায় প্রতিটি মেয়ের মধ্যে মা দুর্গা অবস্থান করছেন।
৬) বজরংবলীর সামনে তিল এর তেলের প্রদীপ জ্বালানো:
সংসারে অনেক নেতিবাচক প্রভাব থাকে সেগুলি বিতারিত না করতে পারলে সংসারে উন্নতি সাধন করা সম্ভব হয় না। সেই কারণে দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর দিন নিজের এবং পরিবারের উপর আগত নেতিবাচক প্রভাবকে দূর করার জন্য দক্ষিণ দিকে মুখ করে বজরংবলীর সামনে তিল এর তেলের প্রদীপ জ্বালান।
তারপর খুবই উচ্চস্বরে সুন্দর কান্ড পাঠ করুন। এর মধ্যে দিয়ে আপনার সংসারের সমস্ত বাধা বিপদ, নেতিবাচক বিষয়গুলি সব দূর হয়ে গিয়ে সংসারে আসবে সমৃদ্ধি।
দূর্গা পূজার সময় এই কাজ গুলি ভুলেও করবেন না, সঠিক পদ্ধতি জানুন
৭) গায়ত্রী মন্ত্র:
গায়ত্রী মন্ত্র এবং মনে যদি থাকে ভক্তি তাহলে সেক্ষেত্রে অনেকখানি শুভ লাভ পেতে পারেন। শাস্ত্র অনুযায়ী জানা যায় যে, বিজয়া দশমীর দিন থেকে প্রতিদিন ১০৮ বার গায়ত্রী মন্ত্র জপ করতে হবে। এর প্রভাবে বুদ্ধি অনেকখানি শুদ্ধ হয় এবং নির্মল হয়।
কোন দুর্বল ব্যক্তির উপরে নিজের শক্তি ও সামর্থ্য প্রয়োগ করা উচিত নয় এমনটাই জানানো হয় শাস্ত্র অনুসারে। তবে প্রতিনিয়ত যদি গায়ত্রী মন্ত্র জপ করা যায় জীবনে উন্নতি সাধনের পাশাপাশি সকলের কুদৃষ্টি দূর হবে আর নেতিবাচক চিন্তা ভাবনা গুলি দূর হয়ে যাবে মাথা থেকে।
দেবী দুর্গা বিজয়া দশমী তে পাড়ি দেন কৈলাসে, তবে মর্ত্য বাসীর জন্য রেখে যান অনেক কিছুই। সেইগুলি নিষ্ঠা ভরে পালন করলে, মনে ভক্তি রেখে সেগুলি যদি সঠিকভাবে নিয়ম মেনে করা যায়, তাহলে অনেক বাধা বিপদ পেরিয়ে জীবনে আনা যাবে অপার সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধি।
বিজয়া দশমীতে দেবীর বরণ, সিঁদুর খেলা, সবকিছুর মধ্যেও হাসি, কান্না আর আনন্দ মিলেমিশে এক হয়ে যায়। এরপরেও থাকে এমন কিছু নিয়ম যা আপনার জীবনকে সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে পারে।
সবার জীবনকে ভরিয়ে তুলতে দেবী দুর্গা সকলকে আশীর্বাদ করেন, আর সেই আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে বিজয়া দশমীতে এই নিয়মগুলি পালন করলে জীবন থেকে দূর হয়ে যাবে সমস্ত অভাব অনটন এবং বাধা-বিপত্তি। ছোট্ট ছোট্ট এই উপাচার গুলি আপনার জীবনকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিতে পারে। সকলের বিজয়া দশমী মন খারাপের মধ্যেও খুবই ভালোভাবে কাটুক।