প্রতিবছর দুর্গোৎসব আমাদের জীবনের সকল দুঃখ-কষ্ট দূর করে দিয়ে আনন্দে ভরিয়ে তোলে, তবে এই সময় দেবী কে সন্তুষ্ট করতে আমরা কত কিছুই না করে থাকি, পছন্দের নৈবেদ্য, ভোগ নিবেদন করা থেকে ফুল, ফল, মিষ্টান্ন সবকিছু দিয়েই ভক্তি জানানো হয় এবং পুষ্পাঞ্জলী, সন্ধ্যা আরতি, সন্ধিপূজা বিভিন্ন নিয়মের মধ্যে দিয়ে মা দুর্গাকে উপাসনা করা হয়।
দুর্গাপূজার শেষ দুদিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়, এই শেষ দুই দিন হল মহা অষ্টমী এবং মহা নবমী। অনেকেই এই দুদিন উপবাস রেখে অঞ্জলি দিয়ে থাকেন আর এই দুইদিনে সবচেয়ে বেশি শুভ যোগ থাকে আর এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো কুমারী পূজা।
দুর্গা অষ্টমীর দিনে মা দুর্গার মহা গৌরী রূপের পূজা করা হয়, তাই একে মহা অষ্টমীও বলা হয়। এই দিনে বিশেষ কিছু ভুল এড়িয়ে চলা উচিত, যেগুলি আমাদের জীবনে অশুভ কিছু বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, মহা অষ্টমীতে যে কাজগুলি করা থেকে বিরত থাকতে হবে সেগুলি সম্পর্কে:
✨ ১) তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা:
সারা বছরের জন্য যদি আপনি এই অভ্যেস করতে পারেন তাহলে আপনার জীবন এবং স্বাস্থ্যের উপরে ভালো প্রভাব পড়বে, তাছাড়া যদি কোন শুভ দিন থাকে তাহলে সেই দিনেও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠা শুভ বলে মনে করা হয়।
মহাষ্টমীর দিন সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠা খুবই শুভ। ভুল করেও এই দিন বেশিক্ষণ ঘুমানো যাবে না। উপোস না করলেও তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে স্নান করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে হবে এবং নিজেকে শুদ্ধ করে পরিশুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করতে হবে।
বিষ্ণু পুরাণ অনুসারে মহা অষ্টমীতে পূজার পরের দিনের বেলা পর্যন্ত ঘুমানো উচিত নয় অর্থাৎ আপনি নবমীর দিনেও কিন্তু বেলা করে ঘুমাতে পারবেন না।
✨ ২) মুক্ত মনে পূজা:
মহাষ্টমী একটি শুভ দিন, এই দিনে আন্তরিকতার সাথে এবং শুদ্ধ মনে মা দুর্গার পূজা করুন, মন্ত্র বা সপ্তশতী পাঠ করার সময় কারো সঙ্গে কথা বলবেন না, অঞ্জলি দিন একাগ্রতার সঙ্গে।
এর কারণে পূজার পূর্ণ ফল আপনি পেয়ে যাবেন। দেবীপক্ষ তে উপবাস করে অষ্টমী তিথির শেষে নবমী তিথিতে কুমারী পূজা করলে দীর্ঘায়ু লাভ করা যায়।
✨ ৩) তুলসী তলায় প্রদীপ:
তুলসী তলায় প্রদীপ জ্বালানো প্রতিটি হিন্দু গৃহস্থ বাড়ির জন্য একটি মঙ্গলময় এবং শুভ কাজ। এটা বিশ্বাস করা হয় যে দুর্গাপূজাতেও তুলসী তলা একেবারেই অন্ধকার রাখা উচিত নয়, সেখানে প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে হবে।
তাই মহা অষ্টমীর দিন তুলসী গাছের কাছে নয়টি প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রদক্ষিণ করতে হবে, এতে পরিবারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ভরে থাকে।
✨ ৪) যে রং এড়িয়ে যাবেন:
আমরা যে রং এর জামা কাপড় সচারচর পড়ে থাকি সেই রঙের জামা কাপড় কোন শুভ দিন অথবা পূজা পার্বণের দিনে পরা যাবে কিনা সে বিষয়ে রয়েছে অনেক নিয়ম।
সব রং সব দিনে পরা যায় না, তেমনি মহাষ্টমীতে নীল অথবা কালো রঙের কাপড় বা বস্ত্র পরা এড়িয়ে চলতে হবে। এই শুভ দিনে হলুদ অথবা লাল রঙের পোশাক পরা শুভ বলে মনে করা হয়।
⭐ মহা অষ্টমীতে যে কাজগুলি আপনি করতে পারেন:
বিভিন্ন বিধি নিষেধের পাশাপাশি পুরান অনুযায়ী এই শুভদিনে তিল, শস্য এবং জল দান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এই কাজটি এতটাই শুভ যে যা সোনা, রুপো, হাতি এবং ঘোড়া দান করার চেয়েও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
খাদ্য ও জল দান করে মানুষ, দেবতা, পূর্বপুরুষ দের সকলেই তৃপ্তি পান, আর এর ফলে জীবনের সমস্ত সমস্যা ও বাধা-বিপত্তি কেটে গিয়ে জীবন হয়ে ওঠে সহজ, সুখময় ও শান্তিময়।
তাই আপনার জীবনের সমস্ত বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে উঠতে এবং সংসারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনতে এই দুর্গাপূজা তে মহাষ্টমীর দিন এই কাজগুলি করতে পারেন, আর যেগুলি নিষেধ রয়েছে সেগুলি অবশ্যই এড়িয়ে চলুন।
⭐ অষ্টমীতে এই কাজ গুলিতে প্রসন্ন হন মা দুর্গা:
মহা অষ্টমী, এই শুভ দিনে মহিষাসুরমর্দীনির আরাধনা করার দিন। এই দিন দেবীর পূজা করে তাঁর আশীর্বাদ লাভ করার জন্য সকলে ভীষণভাবে চেষ্টা করেন।
এবছর মহাষ্টমীতে এমন কিছু কাজ করতে পারেন যার ফলে আপনি মা দুর্গাকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন এবং নিজের ও নিজের পরিবারের সকল সদস্যের উপরে মায়ের আশীর্বাদ সর্বদাই বর্ষিত হবেই।
✨ ১) অষ্টমীর দিন অশ্বত্থ গাছের ১১ টি পাতায় রাম নাম লিখে হনুমানের মূর্তিতে পরিয়ে দিন, এর প্রভাবে সমস্ত ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পান পাতায় গোলাপের ৭ টি পাপড়ি রেখে দেবী দুর্গাকে অর্পণ করতে পারেন।
✨ ২) অষ্টমীর রাতে চন্দন ও জাফরানের গুঁড়ো মিশিয়ে তা পান পাতায় রাখতে পারেন, দাম্পত্য জীবনে সমস্যা যদি থেকে থাকে তাহলে এই কাজটি অনেক উপকারে আসবে। এরপর দেবী দুর্গার প্রতিমা বা ছবির সামনে বসে চন্ডী স্তোত্র পাঠ করুন। আর চন্দন ও জাফরানের গুঁড়ো মেশানো এই পাউডার দিয়ে প্রতিদিন আপনার কপালে তিলক আঁকতে পারেন।
✨ ৩) দুধ দিয়ে পরিপূর্ণ একটি বাটিতে গৌরীর স্বরূপ স্থাপন করে রুপোর কয়েন অর্পণ করুন, দ্বিতীয় দিন সেই কয়েন তুলে নিয়ে নিজের টাকার পার্সে বা পকেটে রেখে দিন। এর ফলে অর্থ আগমনের পথ প্রশস্থ হবে এবং আপনার চাকরি অথবা ব্যবসাতে উন্নতি সাধন হবে।
✨ ৪) যদি আপনি মনে করেন তাহলে কোন প্রাচীন দুর্গা মন্দিরে গিয়ে দেবীর চরণে আটটি পদ্মফুল অর্পণ করুন। এর ফলে দেবী দুর্গা শীঘ্রই প্রসন্ন হবেন আপনার উপর। আবার রাত বারোটার সময় প্রবেশদ্বারের দরজায় গাওয়া ঘি এর প্রদীপ জ্বালালে সমস্ত দুর্ভাগ্য দূর হয়ে যায় বলে মনে করা হয়, তাই এই কাজটিও আপনার সংসারের জন্য শুভ।
✨ ৫) আপনি যথাযথ পরিশ্রম করা সত্বেও যদি কোন কাজে সাফল্য না পান, তাহলে এই অষ্টমীর দিনে এই কাজটি করতে পারেন, সমস্ত বাধা বিপদ পেরিয়ে উঠতে অষ্টমীর দিন বেল পাতায় লাল চন্দন লাগিয়ে জগদম্বা কে অর্পণ করুন।
⭐ মহাষ্টমীর এই শুভক্ষণে শুভ দিনে আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের মঙ্গল কামনায় এই কাজ গুলি করতে পারেন, যেগুলি আপনার জীবনের সমস্ত বাধা বিপদ পেরিয়ে ইতিবাচক বিষয়গুলি দিয়ে জীবনটাকে ভরিয়ে তুলবে।
দেবী দুর্গাকে সন্তুষ্ট করতে যে কাজগুলি আপনার করা উচিত সেগুলি তো অবশ্যই ভক্তি ভরে করতে হবে, আর মনকে রাখতে হবে শুদ্ধ এবং চিন্তা মুক্ত। আপনার মনে যদি সমস্ত চাওয়া-পাওয়া অসৎ এবং কারও ক্ষতি করার জন্য না হয়ে থাকে তাহলে দেবী দুর্গা আপনার সকল মনের ইচ্ছা অবশ্যই পূর্ণ করবেন।
যে সমস্ত কাজগুলিতে দেবী দুর্গা অসন্তুষ্ট হন সেগুলি করা থেকে বিরত থাকতে হবে, এর পাশাপাশি পূজার কয়েক দিন নিজেকে রাখতে হবে সম্পূর্ণ দেবী আরাধনায় নিযুক্ত।