Maha Sasthi 2023: মহাষষ্ঠীতেই দেবীর বোধন কেন হয়? জানুন তাৎপর্য

দেবীর আরাধনা করতে ভক্তির পাশাপাশি প্রয়োজন হয় বিশেষ কিছু নিয়মের। দেবী দুর্গার অকালবোধন করেছিলেন শ্রী রামচন্দ্র, রাবনের সঙ্গে যুদ্ধের আগে দুর্গার বোধন করেছিলেন দশরথ পুত্র শ্রী রামচন্দ্র।

এরপর দুর্গার আরাধনা করে শক্তি ও সৌভাগ্যের প্রার্থনা করে থাকেন তিনি। তবে ষষ্ঠী থেকেই দুর্গাকে বোধনের এই শুভ কাজটি সারা হয়। দেবীপক্ষের ষষ্ঠীতে দুর্গাকে বোধন করে পূজা করেন রামচন্দ্র। দুর্গার বোধন ঘিরে পৌরাণিক কাহিনীও রয়েছে। কিভাবে মহাষষ্ঠী পালিত হতে শুরু করল সে সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না।

সারা বছর ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তো আসেই, তবে দুর্গাপূজার এই কয়দিন মহাষষ্ঠী, মহা সপ্তমী, মহা অষ্টমী এবং মহানবমী হিসেবেই পরিচিত সকলের কাছে। এই দিনগুলি বিশেষ তিথি হিসেবে সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

মহাষষ্ঠীতেই দেবীর বোধন কেন হয়? জানুন তাৎপর্য
মহাষষ্ঠীতেই দেবীর বোধন কেন হয়? জানুন তাৎপর্য

তো চলুন তাহলে জেনে যাওয়া নেওয়া যাক, মহাষষ্ঠী পালন করার নিয়ম গুলি এবং এই দিন কিভাবে দেবীর বোধন হয়:

দুর্গাপূজার মহাষষ্ঠী এই ভাবে পালন করলে সংসারে আসবে সমৃদ্ধি

বোধন:

বোধন কথাটির অর্থ হল জাগ্রত করা, পৃথিবীতে দুর্গার আবাহন এর জন্য বোধনের রীতি প্রচলিত রয়েছে, এই দিন কল্পারম্ভ দিয়ে শুরু হয় দুর্গার বোধন, ষষ্ঠীর সকালেই এই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়।

তারপর দেবী দুর্গার সামনে প্রার্থনা করা হয় যে, ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত সম্পূর্ণ পূজা পর্বে যেন কোন বিঘ্ন না ঘটে, কারো কোন ক্ষতি না হয়। এরপরে ঘট, জলপূর্ণ একটি তামার পাত্র মণ্ডপের কোনে স্থাপন করতে হয় আর এই স্থানেই দূর্গা ও চন্ডীর পূজা করা হয়। এরপর হয় দুর্গার বোধন তারপর হয় অধিবাস তারপর আমন্ত্রণের পর্ব।

বোধনের পর বিল্ব শাখার দেবীকে আহ্বান জানানো হয় অশুভ শক্তি দূর করার জন্য ঘটের চারপাশে তীর কাঠিতে সুতো জড়িয়ে আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, আর এইভাবেই শেষ হয় মহাষষ্ঠীর আচার অনুষ্ঠান।

কল্পারম্ভ কি? বোধন থেকে সন্ধি পূজা সবকিছু জানুন

দেবীর বোধনের তাৎপর্য:

মহাষষ্ঠীতে দেবী দুর্গার বোধন হয়ে যায় সেটা তো আমরা জানলাম। এই আচার অনুষ্ঠানের একটি পৌরাণিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রচলিত ধারণা অনুসারে জানা যায় যে, এই দিন স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে পদার্পণ করেন দেবী দুর্গা। সঙ্গে থাকেন তার চার সন্তান লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, স্বরসতী।

এই দিন দুর্গার মুখের আবরণ উন্মোচিত করা হয়। আর মনে করা হয় যে বোধনের পর প্রতিমার মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়। আর তারপরেই তার পূজার মধ্যে দিয়ে সকল ভক্তদের মনের কথা মায়ের কাছে জানানো হয়। এই বোধন আবার অকালবোধন হিসেবেও খ্যাত।

হিন্দু শাস্ত্র মতে সূর্যের উত্তরায়ণ দেবতাদের সকাল বলে মনে করা হয়। উত্তরায়নের ৬ মাস কে দেবতাদের একদিন হিসেবে গণ্য করা হয় আবার সকালে সমস্ত দেব দেবীর পূজা করা হয়। আবার দক্ষিণায়ন শুরু হলে ছয় মাসের জন্য নিদ্রায় চলে যান সকল দেব-দেবী।

এই দক্ষিণায়ন দেবতাদের রাত হিসেবে পরিচিত। রাতে দেবদেবীর পূজা করা হয় না কিন্তু দক্ষিণায়নের ছয় মাসের মধ্যে দুর্গাপূজা হয় বলে বোধনের মাধ্যমে আগে দেবী দুর্গাকে ঘুম থেকে জাগানো হয়।।

পুরাণের কাহিনী অনুসারে আরও একটি কাহিনী জড়িত রয়েছে, সেটি হল রাবণের সঙ্গে যুদ্ধ করার আগে দুর্গার বোধন করেছিলেন দশরথ পুত্র শ্রী রামচন্দ্র। এরপর দুর্গার আরাধনা করে শক্তি ও সৌভাগ্যের প্রার্থনা করেন তিনি। অকালে দুর্গাকে জাগিয়ে তোলা হয়েছিল বলেই এই বোধন কে “অকালবোধন” বলা হয়।

দেবী দুর্গাকে কিভাবে পুজো করলে সৌভাগ্য ফিরে আসবে

মহা ষষ্ঠীতে মেনে চলুন এই নিয়ম গুলি, দূর হয়ে যাবে আর্থিক সংকট:

শারদ উৎসবের এই পাঁচ দিন বাঙালি অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। দুর্গোৎসবের সূচনা হয় মহাষষ্ঠীতে আর সমাপ্ত হয় বিজয়া দশমীতে।

দেবী দুর্গাকে বোধনের দিন ষষ্ঠীর দিন হিসেবে কিছু টোটকা অথবা নিয়ম মেনে চললে সারা বছর সুখ শান্তিতে জীবন কাটবে আর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে মনে করা হয়। আর বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যে এই নিয়মগুলি পালন করার ক্ষেত্রে আপনাকে পরিশুদ্ধ হয়ে অথবা স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করতে হবে অবশ্যই।

১) দেবী মূর্তির সামনে কর্পূর:

দেবী দুর্গার মূর্তি অথবা ছবির সামনে একটি কর্পূর দানি রাখতে হবে, তাতে কিছুটা কর্পূর এবং পাঁচটি লবঙ্গ রেখে দিতে হবে। ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় ধূপ ধুনো সহযোগে সেই কর্পূর ও লবঙ্গ একসঙ্গে জ্বালিয়ে দেবী দুর্গার আরতি করতে হবে।

তবে এক্ষেত্রে দুর্গা মন্ত্র জপ করাটা আবশ্যক। এই নিয়ম পালন করলে আর্থিক সংকট এবং বাস্তু দোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় বলে মনে করা হয়।

দুর্গাপূজার দিন এই ৭টি কাজ শাস্ত্র মতে মানা

২) কলাগাছ রোপন:

কলা গাছ প্রতিটি উৎসব অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে পূজার ক্ষেত্রেও একটি শুভ কাজ বলে মনে করা হয়। তবে মহা ষষ্ঠীর দিন একটি টবে ছোট্ট কলা গাছ লাগাতে পারেন।

আপনি যদি কোন জায়গায় কলা গাছ লাগাতে পারেন তাহলে সেটা খুবই ভালো কিন্তু যদি তেমন জায়গা না থাকে তাহলে টবে কিছুটা মাটি দিয়ে ছোট্ট কলা গাছ লাগাতে পারেন। কলা গাছটিকে হলুদ কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন, কলা গাছের গোড়ায় দিকে হলুদ সুতো বেঁধে দিন।

ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত সেই কলা গাছের গোড়ায় জল দিন এবং ধুপ, প্রদীপ জ্বেলে পূজা করতে পারেন। এই নিয়ম পালনে আপনার যদি কোন ব্যবসা থাকে তাহলে সেই ব্যবসায় উন্নতি সাধন হবে।

দেবী দুর্গা কে সন্তুষ্ট করতে এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখবেন

৩) নারকেল, সিঁদুর ও স্বস্তিক চিহ্ন:

প্রতিটি উৎসবের মতো দুর্গা পূজাতে ও নারকেল, সিঁদুর এবং স্বস্তিক চিহ্ন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মহা ষষ্ঠীর দিন একটি নারকেলের উপর সিঁদুর দিয়ে মায়ের নাম অথবা স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে দিতে পারেন।

একটি লাল রঙের চেলিতে স্বস্তিক চিহ্ন আঁকা নারকেল, সাদা তিল, হলুদ ফুল, সিদ্ধি একসঙ্গে রেখে চেলিটি বেঁধে নিন। বাড়ির ঠাকুর ঘরে এই চেলিটি রেখে দিন ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত। এই নিয়মটি পালন করলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়।

দশমীতে দুর্গা বিসর্জন হওয়ার পর সেই জিনিসগুলো টাকা রাখার জায়গায় রেখে প্রতিদিন ধুপ প্রদীপ দেখিয়ে পুজো করতে পারেন, এতেই হবে আর্থিক উন্নতি, জীবনের নানা সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে পারেন এবং আপনার চাকরি ও ব্যবসার ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন হবে খুব তাড়াতাড়ি।

এই গাছগুলি দেবীপক্ষের মধ্যে বাড়িতে লাগান মা দুর্গা সকল দুঃখ বিনাশ করবেন

৪) লবণ ও জল দিয়ে ঘর মুছুন:

এছাড়া দূর্গা পূজার দিনে বাড়িতে নুনের সঙ্গে জল মিশিয়ে তা দিয়ে ঘর মুছলেও আপনার কাঙ্খিত মনের আশা পূর্ণ হয় বলে জানা যায়।

এছাড়াও লবণ মিশ্রিত জল দিয়ে ঘর মুছলে সবসময়ের জন্য ঘরে একটা আলাদা ঠান্ডা পরিবেশ বজায় থাকে, এর পাশাপাশি ঘরে থাকা সকল নেতিবাচক বিষয়গুলি সরে গিয়ে ইতিবাচক বিষয়গুলির প্রবেশ ঘটে।

শ্রীদেবীর বোধন দিয়ে শুরু হয় বাঙালির প্রাণীর উৎসব দুর্গোৎসব, দুর্গা ষষ্ঠী ও বোধনের মাহাত্ম্য:

প্রথমত দেবী দুর্গার মুখ উন্মোচন করেই মহাষষ্ঠীর পূজা শুরু করা হয়। তারপর হয় বোধন এই বোধন শব্দের অর্থ হলো জাগ্রত করা। প্রসঙ্গত উল্লেখ খুঁজে মহাষষ্ঠীতে দেবীর ষষ্ঠ রূপ কাত্যায়নের আরাধনা করা হয়, নবরাত্রিতে দেবীর ন’টি রূপের আরাধনা করা হয়, ষষ্ঠ দিনে দেবী কাত্যায়নি রোগ, দুঃখ, শোক, কষ্ট, ভয়কে দূর করার আশীর্বাদ প্রদান করে থাকেন সকল ভক্তদের।

জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর করতে ও সংসার সুখের ও শান্তির করে তুলতে সমৃদ্ধশালী করে তুলতে কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত তার মধ্যে সন্তানের মঙ্গল কামনায় এই দিন বাড়ির সব মহিলা ও মায়েরা দুর্গা ষষ্ঠী পালন করে থাকেন ভক্তিভরে। শাক্ত মতে দেবী কাত্যায়নি হলেন মহাশক্তির একটি ভয়ঙ্কর রূপ।

দুর্গাপূজা করুন এই নিয়মে আপনার উপর প্রসন্ন হবেন দুর্গতিনাশিনী

চন্ডী বা ভদ্রকালীর মতো যুদ্ধের দেবী হিসেবে পূজিত হয়ে আসছেন প্রাচীন কাল থেকে, নবরাত্রির এই ষষ্ঠ রূপের দেবীর গায়ের রং সূর্যের মতো লাল, উমার মতই গায়ের রং তার, ষষ্ঠীতে লাল রঙের পোশাক পরা সেই কারণে শুভ বলে মনে করা হয়।

আর এই জন্যই পূজার কয়েক দিন লাল পোশাক এবং লাল ফুলের গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম। সংসারের শুভ শক্তির আগমন ঘটাতে যা যা নিয়ম রয়েছে সেই সবগুলি পালন করতে গেলে খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। যে নিয়মগুলি রয়েছে সেগুলো যদি ভক্তিভরে পালন করা যায় তাহলে খুব সহজেই দেবী দুর্গার আশীর্বাদ প্রাপ্ত করার পাশাপাশি সংসারে সুখ শান্তি সমৃদ্ধি বজায় থাকবে সারা জীবন। মহাষষ্ঠীর এই বোধনের দিন সকলের কাটুক খুবই আনন্দে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top