Shivratri 2024: মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে শিবরাত্রিতে কি করবেন ও কি করবেন না

শিব ভক্তরা সারা বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন এই মহা শিবরাত্রির এই শুভ দিনটির জন্য। শিব ঠাকুরের আরাধনার মহোৎসব হলো এই মহা শিবরাত্রি।  মহা শিবরাত্রি তে সারাদিন উপবাস থেকে চার প্রহরে শিব ঠাকুরের পূজা করা হয়ে থাকে।

এই মহা শিবরাত্রির একদিন আগে থেকেই ভক্তরা উপবাসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেন। এর পাশাপাশি শিবরাত্রির একদিন আগে সাত্বিক ভোজন করা হয়। শিব ঠাকুর হলেন সর্বশক্তিমান খুব অল্পতেই সন্তুষ্ট হয়ে যান। আবার তেমনি যদি তার পুজো করার সময় কোনো রকম ভুল ত্রুটি হয়, সে ক্ষেত্রেও খুব তাড়াতাড়ি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন।

শিবরাত্রি: মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে শিবরাত্রিতে কি করবেন ও কি করবেন না
শিবরাত্রি: মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে শিবরাত্রিতে কি করবেন ও কি করবেন না

আমরা সাধ্যমত জিনিস দিয়ে মহাদেবের পুজো তো করে থাকি, তবে এখানে বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরী যে, তিনি কোন কোন বিষয়ে সন্তুষ্ট হন আর কোন কোন বিষয়ে রুষ্ট হতে পারেন।

শিবরাত্রির দিন কি করবেন আর কি করবেন না:

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক শিবরাত্রির দিন আপনি কি করবেন আর কি করবেন না:

পুরাণ মতে জানা যায় যে, মহাদেবের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য শিবরাত্রির দিন বেশ কিছু নিয়মকানুন ও উপাচার মেনে চলা খুবই জরুরী।

১) পুরান মতে জানা যায় যে, দেবাদিদেব মহাদেব ভক্তদের কাছ থেকে খুব অল্পতেই সন্তুষ্ট হন। তাকে বেলপাতা আর গঙ্গা জল দিয়ে পূজা করলেই তিনি এই টুকুতেই খুশি হয়ে যান, আর ভক্তদের সকল মনোস্কামনা পূর্ণ করেন।

২) শাস্ত্রমতে জানা যায় যে, মহাদেবের কাছ থেকে আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র পোশাক পরিস্কার হলেই চলবে না। তার সঙ্গে সঙ্গে ভক্তের মনও যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, কারো প্রতি ঘৃণা থাকা চলবে না, মনে হিংসা, প্রতিহিংসা, লোভ, রাগ এবং কোন রকম খারাপ চিন্তা ভাবনা যদি থেকে থাকে তাহলে আপনার সমস্ত কষ্ট কিন্তু বৃথা যেতে পারে।

৩) দেবাদিদেব মহাদেবের পুজো করার সময় স্নানের পর শুদ্ধ কাপড় জামা পরিধান করতে হয় অথবা পরিষ্কার পোশাক পরে তবেই পূজা অর্চনায় বসতে হয়।

৪) শিবরাত্রির এই শুভ দিনে আমিষ জাতীয় কোন খাবার খাওয়া চলবে না পূর্ণার্থি ও ভক্তদের। অনেক মানুষ সম্পূর্ণ উপবাস থেকে পুজো করেন। পূজো দেওয়ার পরও আমিষ খাবার খাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই, এই দিন শুধুমাত্র নিরামিষ খাবার খাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

৫) মহা শিবরাত্রির দিন ভগবান শিব কে পঞ্চামৃত (দুধ, জল, গঙ্গা জল, মধু ও জাফরান এর মিশ্রণ) দিয়ে স্নান করাতে হয়। এর পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হয় যে, সারা রাত যেন প্রদীপ জ্বালানো থাকে। এর পরে ভগবান শিব কে চন্দনের তিলক লাগাতে হয়, এই নিয়ম মেনে চললে শুভ যোগের সম্ভাবনা থাকে।

৬) এই শুভদিনে দুবার না খাওয়া, কোনরকম ভারী কাজ না করা, পরের অন্ন ভোজন না করা, দূরে কোথাও যাত্রা না করাই ভালো।

৭) যারা শিবরাত্রি ব্রত করেন তারা অবশ্যই এই পারন করে থাকেন, এই দিন মহাদেব কে অন্ন নিবেদন করে পারন মন্ত্র উচ্চারণ করে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়।

৮) পুজোর শেষে ফলাহার গ্রহণ করুন, রাতে নিরামিষ হালকা খাবার খেতে পারেন, পেট ভরে কখনোই খাবেন না।

৯) গোটা হলুদ খুবই শুভ বলে মনে করা হলেও ভুল করেও কিন্তু শিব পূজাতে গোটা হলুদ ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়।

১০) মহা শিবরাত্রির দিন পূজোর নিয়ম মেনে পুজো করা ভীষণ দরকার, তা না হলে পুণ্য অর্জন হবে না।

১১) যারা নির্জলা উপবাস করতে পারেন না, তারা যে কোন শরবত খেতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে কিন্তু ব্রাহ্মণের অনুমতি নিয়ে নিতে একেবারেই ভুলবেন না। তবে ভুল করেও পেট ভরে কোন খাবার খাবেন না।

১২) গঙ্গা জল, মধু দিয়ে ধনু রাশির শুকনো বাদাম দিয়ে ভোগ দিলে মহাদেব সন্তুষ্ট হন এবং শিবলিঙ্গ স্নান করান, বেলপাতা, গোলাপ ইত্যাদি দিয়ে পূজা করে আরতি করুন।

১৩) শিবরাত্রির দিন পূজা রাতের বেলা হলেও পুজোর দিন সকালবেলা উঠে ভালো করে স্নান সেরে নিতে পারেন শুদ্ধ হওয়ার জন্য। তবে এক্ষেত্রে যদি গঙ্গা স্নান করতে পারেন তাহলে তো আরো ভালো।

মহা শিবরাত্রির দিন কি কি খাবার খাবেন না?

শিবরাত্রি হল বাংলায় প্রচলিত বহু প্রাচীন ব্রত। বহুকাল ধরে এই ব্রত চলে আসছে। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে এই শিবরাত্রি উৎসব পালিত হয়। বাঙ্গালীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এই ব্রত, আর বিশেষ করে মহিলাদের জন্য এটি একটি পরম ব্রত বলা যেতে পারে।

প্রায় সব বাঙালি মহিলারা কখনো না কখনো এই ব্রত পালন করেই থাকেন। শিবরাত্রিতে পূজো করলে শুধুই মহিলাদের ভালো জীবনসঙ্গী প্রাপ্তি হয় তা কিন্তু নয়। যে কোন মানুষের জীবনে উন্নতি, সমৃদ্ধি, সুখ, শান্তি ফিরে আসে।

তবে এমন শুভদিনে আপনি কোন কোন খাবারগুলি একেবারেই খেতে পারবেন না, জেনে নিন:

  1. উপস ভাঙ্গার সময় একেবারে হালকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  2. এই শুভদিনে কোন রকম শস্য গ্রহণ করা যাবে না।
  3. শিবরাত্রির উপবাস একেবারে নির্জলা বা নিরাহার হওয়া উচিত, কেননা এদিন কোন শক্ত খাবার খাওয়া যায় না।
  4. প্যাকেটজাত জুস অথবা কোন হেলথ ড্রিংকস খেতে পারবেন না।
  5. কোনরকম মসলা, সবজি যেমন ধরুন পেঁয়াজ, রসুন খাওয়া যাবেনা।
  6. আমিষ খাবার একেবারেই নয়, সে ক্ষেত্রে ফলাহার করা যেতে পারে হালকা পরিমাণে।

শাস্ত্র মতে শিবরাত্রির দিন সকাল থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত উপবাস করেই পুজো করতে হয় ভক্তদের। তবে যিনি উপবাস করছেন তিনি দুধ, ফল খেতে পারেন, কিন্তু সেসব খেতে হবে সূর্যাস্তের আগে।

যারা নিষ্ঠার সাথে, ভক্তির সঙ্গে এই ব্রত পালন করেন, তারা সারা রাত জেগে থাকেন চোখের পাতা এক করেন না। রাত জেগে ভক্তিগীতি গেয়ে থাকেন। পরের দিন পূজোর প্রসাদ খেয়ে উপবাস ভঙ্গ করতে হয়।

শিবরাত্রির দিন গঙ্গা স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায় বলে বিশ্বাস করা হয়। সকল প্রকার নিয়ম মেনে শিবরাত্রির ব্রত পালন করার মধ্যে দিয়ে আপনার সকল মনস্কামনা পূর্ণ হোক এবং সংসারে আসুক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি।।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top