Shivratri 2024: মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে কি অর্পণ করবেন আর কি করবেন না

তিনি হলেন দেবাদিদেব মহাদেব, তাকে সন্তুষ্ট করতে মর্ত্যবাসীর মানুষজন একেবারে অস্থির হয়ে পড়েন। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা জরুরি যে, তিনি খুবই অল্পতেই সন্তুষ্ট হন। তাই তো শুধু মনের ভক্তি, শ্রদ্ধা, নিষ্ঠা, নিষ্পাপ মন এগুলি খুবই বেশি পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিব ঠাকুর হলেন সর্বশক্তিমান। শিব যেমন খুব অল্পেতে সন্তুষ্ট হন আবার তেমনই যদি তার পুজো করার সময় কোন রকম ভুল ত্রুটি হয়, তাহলে খুব তাড়াতাড়ি তিনি অসন্তুষ্ট হয়ে পড়েন।

শিবরাত্রি: মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে কি অর্পণ করবেন আর কি করবেন না
শিবরাত্রি: মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে কি অর্পণ করবেন আর কি করবেন না

তার ভক্তরা নিজেদের সাধ্যমত বিভিন্ন রকমের নৈবেদ্য দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করতে সচেষ্ট হন। তবে এখানে বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরি। এই যেমন এই শিবরাত্রির ব্রত পালন করে মহাদেবের উদ্দেশ্যে আপনি কোন কোন জিনিস গুলি অর্পণ করতে পারবেন আর কোনগুলি পারবেন না, সেগুলি সম্পর্কে একটু ধারণা করা যেতেই পারে, কি বলেন !

তাহলে জেনে নেওয়া যাক:

শিবরাত্রিতে মহাদেবকে কি কি অর্পণ করবেন:

১. আমরা আগেই জেনেছি ধুতরা ফুল মহাদেবের খুবই পছন্দের, তাই এই পূজায় ধুতরা ফুল সেটি যেকোনো রঙের হতে পারে, সেটি অর্পণ করতে একেবারেই ভুলবেন না।

২. ধুতরা ফল শিবের মাথায় অর্পণ করলে শিব ঠাকুর খুবই সন্তুষ্ট হন বলে জানা যায়। তাই এই সামান্য জিনিসটি আপনি নিশ্চয়ই করবেন মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে, তাই না !

৩. পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় আখের রস মহাদেবকে অর্পণ করলে তিনি খুবই সন্তুষ্ট হন। তাই এই পূজায় আঁখ এর রস অর্পণ করতে একেবারেই ভুলবেন না।

৪. শিবের মাথায় গঙ্গা জল অবশ্যই ঢালতে হবে তবে পারলে দুধ ও ঢেলে থাকেন অনেকে।

৫. তিনটি পত্রযুক্ত নিখুঁত বেলপাতা শিবলিঙ্গের মাথায় দিতে হয়, এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে খুবই সুন্দর, মসৃণ আর তিনটি পাতাযুক্ত নিখুঁত বেলপাতা যেন অবশ্যই থাকে আপনার পূজার ডালিতে।

৬. ভাঙ অথবা সিদ্ধি শিব এর খুবই প্রিয় বলে আমরা সকলেই জানি। শিব পূজার সময় একটি ভাঙ পাতা দিন বা ভাং বেটে সেটা দুধ ও গঙ্গা জলে মিশিয়ে দিতে পারেন।

৭. মহা শিবরাত্রির এই শুভ তিথিতে রূপোর সাপ অর্পণ করুন। যদি কালসর্প যোগ থাকে তাহলে রুপোর জোড়া সাপ নিবেদন করতে পারেন।

শিবরাত্রিতে মহাদেবকে কি কি অর্পণ করবেন না: 

১. শিব ঠাকুরের পূজায় তুলসী পাতার ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ, তাই ভুল করেও তুলসী পাতা শিবের পূজায় ব্যবহার করবেন না।

২. শিবের মাথায় জল ঢালার সময় তামা অথবা পিতলের পাত্র ব্যবহার করতে হবে। স্টিল বা লোহার পাত্র কোনভাবেই ব্যবহার করা যাবে না। তাই আপনার সাধ্যমত তামার অথবা পিতলের পাত্র জোগাড় করে রাখুন।

৩. শঙ্খ দ্বারা অভিষেক বা শিব পূজায় শঙ্খের ব্যবহার একেবারেই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে এই পূজায় কোনো ভাবেই শাঁখ বাজানো যাবে না।

৪. গরুর খাঁটি দুধ ব্যবহার করতে হবে, এক্ষেত্রে প্যাকেট করা দুধ ব্যবহার না করাটাই ভালো। শিবলিঙ্গের মাথায় যখন আপনি দুধ ঢালবেন সেক্ষেত্রে গরুর খাঁটি দুধ জোগাড় করে রাখাটা আপনার জন্য বাঞ্ছনীয়।

৫. সাদা রং এর সমস্ত রকম ফুল শিব ঠাকুর পছন্দ করেন, তা বলে এই না যে তিনি সাদা রঙের চম্পা বা কেতকি ফুল পছন্দ করবেন। কেননা এই দুটি ফুল শিব দ্বারা অবিশাপিত। তাই কখনো ভুলেও এই দুটি ফুল শিব ঠাকুরকে অর্পণ করবেন না।

৬. মহাদেবের এই পূজায় তিল কোনভাবেই ব্যবহার করা যাবে না।

৭. সিঁদুর কোনভাবেই শিব পূজায় দেবেন না, কখনো ভুলে শিবলিঙ্গে সিঁদুরের তিলক দেবেন না।

৮. অনেকে হয়তো ভাববেন যে ডাব যা, নারকেলও তাই, নারকেলের জল শিবের মাথায় ঢালা যেতেই পারে। এমন ভুল কখনোই করবেন না, নারকেলের জল শিব পূজায় ব্যবহার করা যায় না, এমনকি নারকেলও শিব পূজায় ব্যবহার করা যায় না।

৯. শিবলিঙ্গে কুমকুম কখনোই ব্যবহার করা যায় না। কখনোই শিবলিঙ্গে কুমকুমের তিলক লাগাবেন না। মহা শিবরাত্রিতে আপনি মহাদেবকে খুশি করতে চন্দনের টিকা প্রয়োগ করতেই পারেন। তবে এক্ষেত্রে দেবী পার্বতী ও ভগবান গণেশের মূর্তির উপরে কুমকুম এর টিকা লাগানো যেতেই পারে।

⭐ শিবরাত্রির ব্রতর জন্য সারা বছর ধরে সকলে অপেক্ষা করে থাকেন। এই দিনে ভক্তরা মন্দিরে গিয়ে শিব লিঙ্গকে গঙ্গা জল দিয়ে ভালো করে স্নান করিয়ে ফুল, ফল দিয়ে অর্ঘ্য অর্পণ করে থাকেন। মোক্ষ লাভের আশায় শিবের মাথায় শুধুমাত্র জল ঢাললেই হয় না।

উপোস করে সারারাত জেগে প্রহরে প্রহরে জল ঢালা, নানা আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই মহা শিবরাত্রি ধুমধাম ভাবে পালন করা হয়। তবে শিবরাত্রি পূজা করতে হয়, ব্রত পালন করতে হয় তাই করে ফেললাম, তেমনটা কিন্তু নয়। নিয়ম না মেনে পুজো করলে মনোবাঞ্ছে তা পূর্ণ হবেই না, পরিবর্তে দুর্ভোগের শেষ নেই।

তাইতো কিছু নিয়ম আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে। বিশেষ করে কোন ব্রাহ্মণের সাথে পরামর্শ করে আপনি সমস্ত বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। যার ফলে আপনি মহাদেবকে খুবই অল্পতেই সন্তুষ্ট করতে পারবেন।

আর আপনার সকল মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি এত কষ্ট করে যে ব্রত পালন করছেন সেটাও কিন্তু সার্থক হবে। আর হ্যাঁ, এই দিন গঙ্গাস্নান করে নিতে ভুলবেন না। গঙ্গা স্নান করলে সারা বছরের অনেকটা পাপ মুক্তি ঘটে বলে জানা যায়।

তবে সবার পক্ষে গঙ্গা স্নান করাটা সম্ভব হয়ে ওঠে না ঠিকই, তবে এক্ষেত্রে সবার পূজার ঘরে গঙ্গাজল তো অবশ্যই থাকে, আপনার স্নানের জলে কিছুটা গঙ্গাজল মিশিয়ে সেই জলে স্নান করতে পারেন। এর ফলে আপনি হয়তো গঙ্গায় গিয়ে স্নান করলেন না, কিন্তু আপনার ঘরে বসেই গঙ্গা স্নানটা হয়েই গেল।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top