Maha Shivratri 2024: মহা শিবরাত্রির উপবাসে আপনার কি কি করণীয়

প্রতিটি পূজা পার্বণের আলাদা আলাদা নিয়ম, আলাদা আলাদা রীতি, আর সেগুলি মেনে চলার মধ্যে দিয়ে ভক্তরা নিজেদের মনস্কামনা পূর্ণ করার আশা রেখে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। তবে শিব পূজার একটি বড় মহৎ উৎসব হলো শিবরাত্রি। শিব আরাধনা মহোৎসব বলা যেতে পারে।

মহা শিবরাত্রি তে সারাদিন উপবাস থেকে চার প্রহরে শিবের পূজা করা হয়। মহা শিবরাত্রির একদিন আগে থেকেই ভক্তরা উপবাসের সমস্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেন।

তবে মহা শিবরাত্রি তে একটি সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সারা রাত্রি ব্যাপি জাগরণ করতে হয়। সেই কারণে অনেক ভক্তরা এই উপবাস করা থেকে পিছিয়ে থাকেন। কেননা তারা যদি কোনোভাবেই রাতে ঘুমিয়ে পড়েন সে ক্ষেত্রে যদি অমঙ্গল কিছু হয়ে যায়!

মহা শিবরাত্রি: মহা শিবরাত্রির উপবাসে আপনার কি কি করণীয়
মহা শিবরাত্রি: মহা শিবরাত্রির উপবাসে আপনার কি কি করণীয়

অনেকেই উপবাসে থাকতে পারেন না, তাই এই ব্রত সকলে করে উঠতে পারেন না। তবে যারা নিষ্ঠা ও ভক্তির সাথে এই উপবাস পালন করেন, তবে সমস্ত নিয়ম কানুন মেনে চললে আরো বেশি পুণ্য অর্জন করা যায়।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, মহা শিবরাত্রির উপবাস পালন করার মধ্যে আপনি কোন কাজ গুলি করতে পারেন এবং কি খাবার খাওয়া যেতে পারে:

মহা শিবরাত্রির উপবাস পালন করার ক্ষেত্রে আপনার যা করণীয়:

১. এই শুভদিনে সূর্য উদয়ের দু’ঘণ্টা আগে অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে উঠে যাওয়া উচিত। এটি যেমন আপনার শরীরের জন্য খুবই ভালো এবং আপনি যেহেতু একটি ব্রত পালন করতে চলেছেন, সে ক্ষেত্রে আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি পরিশুদ্ধ হতে হবে সারাদিনের জন্য।

২. অসুস্থ ব্যক্তিরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তবেই কিন্তু উপবাস রাখবেন। কেননা উপবাস থাকাকালীন আপনি যদি কোন ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন সে ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে।

৩. সকালে উঠে স্নান তো করলেন, তারপর পরিষ্কার কাপড় পরে নিতে হবে। এবার পুজো ও উপবাসের সংকল্প গ্রহণ করুন, হাতে অখন্ড চাল ও জল নিয়ে সংকল্প করতে পারেন।

৪. এক্ষেত্রে যারা উপবাস রাখছেন, তারা কিন্তু ওম নমঃ শিবায় এই মন্ত্রটি জপ করতে পারবেন সর্বদাই।

৫. সন্ধ্যার সময় শিব পুজো করার আগে আবার স্নান করতে হবে, নিশিত কালের শিব পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে বলে জানা যায়। পরের দিন সকলে স্নান করার পর উপবাস ভেঙ্গে ফেলতে পারেন।

৬. দৃক পঞ্জিকা অনুযায়ী জানা যায় যে, মহা শিবরাত্রির পরের দিন সূর্যোদয়ের পর ও চতুর্দশী তিথি সমাপ্ত হওয়ার আগে, পারন করলে উপবাসের ফল আরো বেশি অধিক পরিমাণে অর্জন করা যায়।

৭. এই মহা শিবরাত্রি পূজায় মহাদেব কে ধুতুরা ফুল, বেলপাতা, দুধ, দই, চন্দন, মধু, ঘি, চিনি অর্পণ করা উচিত। এর ফলে তিনি যেমন সন্তুষ্ট হবেন তিনি আপনার সমস্ত প্রার্থনা সার্থক হবে।

এই মহা শিবরাত্রির শুভদিনে যেগুলি আপনি করবেন না:

  • প্রথমত এই দিন চাল, গম, ডাল, সাদা নুন এই সমস্ত খাবারগুলি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • আমিষ জাতীয় কোন খাবার, পিঁয়াজ, রসুন, এগুলি একেবারে খাওয়া নিষিদ্ধ।

মহা শিবরাত্রির উপবাস রেখে আপনি কি খেতে পারেন: 

  • শিবরাত্রি উপবাসে আপনি যে কোন ফল খেতে পারেন যেমন ধরুন কমলালেবু, আপেল, কলা, বেদানা ইত্যাদি সমস্ত ধরনের ফল খাওয়া যেতে পারে।
  • তবে এই দিন কোন ভাবেই চা পান করবেন না। আপনার যতই চায়ের নেশা থাকুক না কেন, এদিন কিন্তু এটা এড়িয়ে যেতে হবে।
  • তবে দুধ বা দুধ দিয়ে তৈরি কোন শরবত আপনি পান করতে পারেন অনায়াসেই।

শুধুমাত্র মহিলারাই নন, পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে সকলেই পালন করে থাকেন এই মহা শিবরাত্রি ব্রত। হিন্দু শাস্ত্র মতে এই দিনেই শিব ও পার্বতী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তাই ভক্তদের বিশ্বাস অনুসারে এই পূণ্য তিথি পালন করলে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সংসারে আসে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি।

আবার অনেকের বিশ্বাস এই দিন মহা মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র পাঠ করলে শক্তি অনেক খানি বাড়ে। নির্দিষ্ট কিছু আচার, রীতি মেনেই এই বিশেষ দিনে হর পার্বতীর পূজা করতে হয়। তার কাছে সকল মনস্কামনা জানিয়ে প্রার্থনা করতে হয়।

শিবরাত্রির উপবাস রেখে আপনি আর যে কাজগুলি করতে পারেন:

১. এই শুভদিনে চার প্রহর ধরে মহাদেবের পূজা করা হয়। প্রথম প্রহরে জল দিয়ে এবং দ্বিতীয় প্রহরের দই দিয়ে, তৃতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে এবং শেষ প্রহরে মধু দিয়ে, শিবলিঙ্গের অভিষেক করতে হয়।

২. শিবের পূজায় অপরাজিতা, ধূতরা, আকন্দ ফুল এবং বেলপাতা অবশ্যই অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত। এগুলি মহাদেবের খুবই পছন্দের, তাছাড়া তিনি এই অল্পতেই খুবই সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন।

৩. পুজো শেষ হয়ে গেলে মহাদেবের ১০৮ টি নাম আপনি জপ করতে পারেন।

৪. তবে বর্তমান সময় অনুসারে অনেকেই ব্যস্ততার জন্য এবং স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এভাবে ব্রত পালন করতে পারেন না। প্রায় একটা গোটা দিন উপবাস করা এবং সারা রাত জেগে থাকা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না, সে ক্ষেত্রে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করলেও হয়।

৫. স্নান করে শুদ্ধ কাপড়ে সন্ধ্যেতে শিবলিঙ্গে জল ও বেলপাতা নিবেদন করে পুজো করতে হয়।

৬. তারপর পূজোর প্রসাদ গ্রহণ করলে ব্রত পালন করা সম্পন্ন হয়।

৭. এখানে একটা ভুল ধারণা অনেকেরই রয়েছে যে, শিবরাত্রিতে সারা রাত্রি ব্যাপি জাগরণ করতে হয়। তবে রাত না জাগলেও কোনরকম দোষ হয় না, তবে রাত্রি জাগরণ করতে পারলে সে ক্ষেত্রে অনেকটাই ভালো।

সম্পূর্ণ বিষয়টা কিন্তু আপনার মনের ভক্তি, বিশ্বাস, আর নিষ্ঠার উপরে নির্ভর করে। আপনার মনের একাগ্রতা, নিষ্পাপ মন এই পূজার একটি বিশেষ অঙ্গ বলা যায়।

মহা শিবরাত্রির উপোস ভাঙার সময় কি খাবার খেতে পারেন: 

সারাদিনব্যাপী উপবাস থাকার পর আপনি যে সমস্ত খাবারগুলি খেয়ে উপবাস ভাঙ্গবেন সেগুলি জেনে রাখা অবশ্যই অবশ্যই জরুরী। উপবাস ভাঙ্গার সময় আমন্ড, কাজু, পেস্তা, কিসমিস, আনজির, খেজুর, আখরোট এই জাতীয় কোন ড্রাই ফুড খেলে খুব ভালো উপকার পাবেন।

সারাদিন শরীরের যে শক্তি ক্ষয় হয়েছে, সেই ঘাটতি পূরণ করতে এই খাবার গুলি অনেক পরিমাণে সহযোগিতা করবে। তবে মনে রাখবেন যাতে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে এমন কিছু খাবার খেয়ে উপবাস ভাঙা উচিত।

সাবুর পায়েস:

এক্ষেত্রে আপনি কোন হালকা ধরনের খাবার যেমন ধরুন সাবুর পায়েস খেতে পারেন। এটি বানানোর জন্য দুধের মধ্যে এলাচ, দারচিনি দিয়ে হালকা করে জ্বাল করে নিন। জ্বাল দিয়ে দুধের পরিমাণ অর্ধেক করে নিন।

তারপর চিনি, কিসমিস, সাবুদানা দিয়ে অল্প আঁচে মিনিট দশেক মত নেড়ে চেড়ে নামিয়ে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ফ্রিজে জমতে দিন। উপরে বাদাম বা মৌসুমী ফল দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন। সাবুদানার পায়েস আপনার উপবাসের পরে এই খাবারটি শরীরের জন্য খুবই উপকারী হবে।

ঠান্ডা কোন শরবত:

বিভিন্ন রকমের ড্রাই ফুড যেমন ধরুন কাজুবাদাম, পেস্তা, আমন্ড এগুলি অল্প দুধ দিয়ে মেক্সিতে ভালো করে পেস্ট করে নিন। দুধ ফুটতে দিন। ফুটে গেলে জাফরান দিয়ে ওই দুধের মধ্যে চিনি দিয়ে জ্বাল দিন। এবার বাদামের পেস্ট দিয়ে আরো ভালো করে দুধ ফোটান।

গ্যাস বন্ধ করে মসলা গুলো ভালো করে মিশিয়ে নিন এবং ঠান্ডা হতে দিন কিছুক্ষণ। ঠান্ডা হয়ে গেলে ফ্রিজে রেখে দিন তারপর একেবারে ঠান্ডা ঠান্ডা কুল কুল হয়ে গেলে পরিবেশন করুন। এটি কিন্তু আপনার শরীরের জন্য অনেকখানি স্বাস্থ্যসম্মত। এক্ষেত্রে কোনরকম অসুবিধাও আপনার হবে না।

⭐ শিবরাত্রির ব্রত পালন করার মধ্যে দিয়ে মনের শান্তি, সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, মনের মত জীবনসঙ্গী, স্বপ্ন পূরণ সবকিছুর বাস্তবায়ন হোক। সুস্থভাবে, স্বাভাবিকভাবে সকলের মহা শিবরাত্রির উপবাস কাটুক সুন্দর করে। সকলের মনের ইচ্ছা পূর্ণ হোক, দেবাদীদেব মহাদেবের আশীর্বাদ পড়ুক সকলের পরিবারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top