Maha Saptami 2023: সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান এর মাহাত্ম্য কি?

দুর্গাপূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হল মহাসপ্তমীর দিন, এই দিন সকালে কলা বউ অথবা নবপত্রিকা স্নান একটি খুবই বড় পূজা নিয়ম এবং রীতি বলা যায়।

মহা সপ্তমীর দিন সকালে কাছাকাছি কোন নদী অথবা কোন জলাশয় নিয়ে যাওয়া হয় কলা বউ স্নান করানোর জন্য, পুরোহিত নিজেই কাঁধে করে নবপত্রিকা নিয়ে যান, নবপত্রিকা বাংলার দুর্গা পূজার একটি বিশিষ্ট অঙ্গ বলা যায়।

একটি পাতা সমেত কলা গাছের সঙ্গে অপর আটটি স্বপত্র উদ্ভিদ একসাথে করে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা ফুলের লতা দিয়ে নব বধূর আকারে সাজানো হয়। আর একেই বলা হয় “কলা বউ” অথবা “নবপত্রিকা”।

সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান এর মাহাত্ম্য কি?
সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নান এর মাহাত্ম্য কি?

তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে স্বপরিবার দূর্গা প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়, এরপর গণেশের ডান পাশে রাখা হয়।

দুর্গাপূজা করুন এই নিয়মে আপনার উপর প্রসন্ন হবেন দুর্গতিনাশিনী

নবপত্রিকার নয়টি পাতা অথবা নয়টি উদ্ভিদ:

দুর্গাপূজার সময় প্রতিটি মণ্ডপে অথবা বনেদি বাড়িতে যেখানেই পূজা হোক না কেন সেখানে হয়তো লক্ষ্য করলে দেখবেন যে গণেশের ডান পাশে লাল পাড় সাদা শাড়িতে ঘোমটা দিয়ে থাকা একটি কলাগাছ রয়েছে।

অনেকেই এটিকে কলা বউ বা গণেশের স্ত্রী হিসেবে মনে করেন কিন্তু এটি দুর্গা অর্থাৎ গণেশের জননী দেবী দুর্গা। এখানে একটা কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, গণেশের স্ত্রীদের নাম রিদ্ধি ও সিদ্ধি।

এখানে নবপত্রিকার আক্ষরিক অর্থ হলো নয়টি পাতা কিন্তু এখানে নয়টি পাতা নয়, সেখানে উদ্ভিদ দিয়ে নবপত্রিকা গঠন করা হয়, আর এই নয়টি উদ্ভিদের মা দুর্গার নয়টি শক্তির প্রতীক হিসেবে পরিচিত এই নয়টি উদ্ভিদ হল:- রম্ভা, কদলী অথবা কলাগাছ, কচু, হরিদ্রা অর্থাৎ হলুদ, জয়ন্তী, বিল্ব অথবা বেল, দাড়িম্ব অর্থাৎ ডালিম, অশোক, মান ও ধান।

দুর্গাপূজার দিন গুলিতে কোন দিন কোন পোশাক পরবেন? চলুন জানা যাক

নবপত্রিকার সাথে দেবী দুর্গার ৯ টি রূপ

চলুন জানা যাক এই নবপত্রিকার সাথে দেবী দুর্গার ৯ টি রূপের বিশেষ কল্পিত রূপ সম্পর্কে:

নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীক রূপে কল্পনা করা হয়। এই নয় দেবী হলেন –

১) রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী (কলাগাছ),

২) কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা (কচু),

৩) জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী (জয়ন্তী),

৪) হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা (হরিদ্রা),

৫) বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা (বিল্ব/বেল),

৬) দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদান্তিকা (দাড়িম্ব/ডালিম),

৭) অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা (অশোক),

৮) মানাধিষ্ঠাত্রী চামুন্ডা (মান),

৯) ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী (ধান)।

শুভ সপ্তমী শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

নবপত্রিকা পূজা আসলে কি পূজা?

নবপত্রিকা, যেখানে নয়টি উদ্ভিদের কথা উল্লেখ রয়েছে অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে আমাদের এই পৃথিবী শস্য শ্যামলা এবং সবুজে ঘেরা, নব পত্রিকার পূজা প্রকৃতপক্ষে শষ্যদেবীর পূজা, আবার অনেকেই মনে করেন যে এই শস্য বধূকেই দেবীর প্রতীক রূপে গ্রহণ করে প্রথমে পূজা করতে হয়।

তার কারণ হলো শারদীয়া পূজার মূলে বোধহয় এই শস্য দেবীর পূজা রয়েছে। পরবর্তীকালে বিভিন্ন দুর্গাপূজার বিধিতে এই নবপত্রিকার বিভিন্ন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে।

তবে এখানে বলাই বাহুল্য যে এই সবই হলো পৌরাণিক দুর্গার সঙ্গে এই শস্যদেবীকে মিলিয়ে দেওয়ার একটা সচেতন প্রচেষ্টা। এর মধ্যে দিয়ে সকল চাষি ভাইদের মনের ইচ্ছা পূরণ হয়, এছাড়া আমাদের এই ধরণী শস্য-শ্যামলা হয়ে ওঠে।

এই শস্য মাতা পৃথিবীরই রূপভেদ সুতরাং আমাদের জানা এবং অজানার মধ্যে দুর্গা পূজার ভিতর এখনো সেই আদি মাতা পৃথিবীর পূজা অনেকখানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এই গাছগুলি দেবীপক্ষের মধ্যে বাড়িতে লাগান মা দুর্গা সকল দুঃখ বিনাশ করবেন

মহা সপ্তমীতে নবপত্রিকা স্নানের নিয়ম ও মাহাত্ম্য:

মহা সপ্তমীতেই হয় মহা পুজো, সপ্তমীর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা রীতি নীতি, যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম অনুষ্ঠান হল নবপত্রিকা স্নান বা কলা বউ স্নান। সূর্য ওঠার আগেই একটি কলা গাছ পবিত্র গঙ্গার জলে স্নান করানো হয়।

কলাবউ স্নানের নিয়ম হল একটি পাতা সহ কলা গাছের সঙ্গে অপর আটটি স্বমূল, স্বপত্র উদ্ভিদ একসাথে করা হয় প্রথমে, এরপর এক জোড়া বেল সহ শ্বেত অপরাজিতা ফুলের লতা দিয়ে বেঁধে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে ঘোমটা দিয়ে নববধূর আকারে সাজানো হয়। এরপর সিঁদুর দিয়ে গণেশের পাশে অর্থাৎ দেবী দুর্গার ডানদিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয় এই নবপত্রিকা অথবা কলা বউকে।

আবার এই মহাসপ্তমির দিন নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ, ও সপ্তমী বিহিত পুজো প্রশস্তা, কলা বউ স্নান এর রীতি রয়েছে।

সপ্তমীতে পূজার মধ্যে দিয়ে নব পত্রিকার একটি বিশেষ তাৎপর্য হলো নবপত্রিকা অথবা কলা বউকে স্নানের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গাকে প্রকৃতি হিসেবে পূজা করা হয়। আর প্রকৃতিতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ যা আমাদের পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রেখেছে এবং আমাদেরকেও বাঁচিয়ে রেখেছে।

এখানে নয়টি উদ্ভিদ যা দেবীর নয়টি রূপকে ব্যাখ্যা করে, ৯ টি বৃক্ষ নিয়ে পূজা করা হয়, প্রতিটি গাছেই দেবী কোনো না কোনো রুপে অধিষ্ঠান করছেন।

আপনার ভাগ্য ফেরাতে দুর্গাপূজার আগে ঘরে আনুন এই ৫ টি জিনিস

নবপত্রিকা কে কলাবউ কেন বলা হয়?

ছোটবেলা থেকেই পূজার এই স্মৃতি বেশ তরতাজা হয়ে রয়েছে আজও অনেকের মনে, তবে গণেশের পাশে ঘোমটা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কলাগাছ কে সকলেই কলা বউ নামেই চেনেন, যাকে নবপত্রিকা বলা হয়। কিন্তু এই কলা বউকে গণেশের বউ হিসেবে মনে করেন অনেকেই। তবে এই কলা বউ কিন্তু গণেশের স্ত্রী নয়।

নিয়ম অনুসারে নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দুর্গার মহাস্নান সম্পন্ন করা হয়। আবার নবপত্রিকা প্রবেশের আগে পত্রিকার সামনে দুর্গার আবাহন ও পূজা করা হয়, পত্রিকাস্থ অপর কোন দেবীকে আলাদাভাবে পূজা করা হয় না।

তবে এখানে একটা কথা বলতেই হয় যে, দেবী ভগবতে নব দুর্গার উল্লেখ থাকলেও নবপত্রিকার কিন্তু কোন উল্লেখ পাওয়া যায় না। আবার কালিকাপুরাণে এই নিয়ম না থাকলেও সপ্তমীতে পত্রিকা পুজোর কথা বলা হয়েছে, কৃত্তিবাসীর রামায়ণে এর উল্লেখ পাওয়া যায়। আবার অনেকেই মনে করেন শস্যদেবীকে দুর্গার সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার জন্য এই আয়োজন। নবপত্রিকা আসলে শস্য দেবীর পূজা, যা কখনো গণেশের বউ নয়।

অষ্টমীতে পূজার সঠিক বিধি ও অঞ্জলি সম্পর্কে জানা আছে কি?

✨ কলাবউ স্নান নিয়ে বয়ে যায় ভীষণ আনন্দের একটা বন্যা, সূর্য ওঠার আগে ঢাকের তালে সকলে খুবই আনন্দের সাথে কোন পবিত্র জলাশয়, সরোবর অথবা নদীতে নবপত্রিকা অথবা কলা বউ স্নান করাতে নিয়ে যান, নারী-পুরুষ সহ অনেক ছোট ছোট বাচ্চারাও। সেখানে কলা গাছকে স্নান করানোর পর তাকে সুন্দর করে সবকিছু নিয়ম মেনে সাজানোর এই প্রক্রিয়াটি খুবই আগ্রহের সাথে দেখে থাকেন সবাই।

এই বিষয়টি মহা সপ্তমী এবং দুর্গাপূজার সাথে এতটাই ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে এটি ছাড়া দূর্গা পূজা কোনভাবেই ভাবাই যায় না। শুধু কলা বউ স্নানই নয়, এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক নিয়ম, যেগুলি পূজার এই কয়দিনের মধ্যেই পালন করতে হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top