আমাদের ভাগ্য নির্ধারণে আরও অন্যান্য জিনিসগুলি যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি তার সাথে রয়েছে শুভ রং, কোনো পূজায় যখন কোন রঙের পোশাক পরা হয় তখন সেই রং আমাদের সৌভাগ্য কে নির্ধারণ করে।
পূজোর কেনাকাটা সকলেরই প্রায় শেষ, তবে তার মধ্যে অনেকের অনেক রং পছন্দ, আবার এই রং গুলি কোন দিনে পরবেন সে সম্পর্কে হয়তো অনেকেই জানেন না। দুর্গাপূজার এই কয়দিন জামা – কাপড়, জুতো কেনা থেকে শুরু করে বেশিরভাগ বাঙালিরা নিজেদেরকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলেন।
পূজোর এই চার পাঁচ দিন নিয়ম মেনে যদি সেই শুভ রঙের পোশাক পরে থাকেন তাহলে আপনার ভাগ্য চমকাতে বেশিক্ষণ সময় নেবেনা।
অন্যদিকে অবাঙালিদের মধ্যে আবার প্রথমা থেকে নবরাত্রি পালনের রীতি প্রচলিত রয়েছে, ফলে সবমিলিয়ে এখন দেবীপক্ষের সূচনা থেকে পুজোর উৎসব শুরু হয়ে যায়।
অর্থাৎ প্রথমা, দ্বিতীয়, তৃতীয়া এমন করে বিজয়া দশমী পর্যন্ত এই উৎসবের আনন্দ লেগে থাকে। সেই অনুসারে এই দুর্গাপূজা বা নবরাত্রিতে রঙের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, বলা হয় যে এই সময় ভিন্ন ভিন্ন রং মা দুর্গার প্রত্যেকটি রূপকে সমর্পণ করা হয়।
যদি মায়ের কৃপা পেতে চান তাহলে মায়ের পছন্দের রং এর সাথে এবং প্রতিটি দিনের মাহাত্ম্য সম্পর্কে রং বাছাই করে সেই রঙের পোশাক পরতে পারেন।
দুর্গাপূজার দিন গুলিতে কোন দিন কোন পোশাক পরবেন? চলুন জানা যাক
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, দুর্গাপূজার এই নয় দিনে অর্থাৎ প্রথমা থেকে নবমী পর্যন্ত আপনি কোন রঙের পোশাক কোন দিন পরবেন, সে সম্পর্কে:
✨ প্রথমাতে যে রঙের পোশাক পরবেন:
দেবীপক্ষের সূচনা বলতে গেলে প্রথমা, এই তিথি অর্থাৎ নবরাত্রির প্রথম দিন। নবরাত্রির এটি প্রথম দিন বলে প্রথমার দিন মা শৈলপূত্রির পূজা করা হয়।
এই দিন ‘হলুদ’ রঙের পোশাক পরা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। আর বলা হয় যে হলুদ রঙের পোশাক পরলে, পূজা পাঠ করলে তার ফলে সৌভাগ্য ফিরে আসে এবং মায়ের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
✨ দ্বিতীয়াতে যে রঙের পোশাক পরবেন:
এই শুভ দিনে পূজা করা হয় মা ব্রহ্মচারীনি দেবীকে অর্থাৎ দেবী দুর্গার এই ব্রহ্মচারীনী রূপকে। এই দেবীর সবুজ রং অত্যন্ত পছন্দের তাই এই শুভদিনে আপনি ‘সবুজ’ রঙের যে কোন পোশাক পরতে পারেন।
আর এটি শাস্ত্র অনুসারে পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তাহলে মায়ের কৃপা বজায় থাকবে আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের উপর।
✨ তৃতীয়াতে যে রঙের পোশাক পরবেন:
নবরাত্রির তৃতীয় দিন দুর্গা পূজার তৃতীয়া তিথি, এই দিন মা চন্দ্র ঘন্টার পূজা করা হয়। এই দিন আপনি ‘খয়েরি’ রঙের পোশাক পরুন যা চন্দ্রঘন্টা দেবীর খুবই পছন্দের একটি রং।
তাই দেবী দুর্গাকে খুশি করতে এ রঙের পোশাক আপনি অনায়াসেই পড়তে পারেন।
মেয়েদের আরও খয়েরি পোশাক দেখুন
ছেলেদের আরও খয়েরি পোশাক দেখুন
✨ চতুর্থীতে যে রংয়ের পোশাক পরবেন:
চতুর্থী তিথি, যেই দিন মা কুস্মান্ডার পূজা করা হয়। আর এই দেবীর পছন্দের রং হলো ‘গেরুয়া’ অথবা ‘কমলা’ আপনি এই শুভ দিনে গেরুয়া অথবা কমলা রঙের পোশাক পড়তে পারেন।
আর এর ফলে পূজার শুভ ফল লাভ করতে পারবেন।
মেয়েদের আরও গেরুয়া পোশাক দেখুন
ছেলেদের আরও গেরুয়া পোশাক দেখুন
✨ পঞ্চমীতে যে রঙের পোশাক পরবেন:
পঞ্চমী তিথি থেকেই বাঙ্গালীদের দুর্গাপূজা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে শুরু হয়ে যায়। এই দিন মা স্কন্দমাতার পূজা করা হয় এবং এই দিন ‘সাদা’ রং এর পোশাক পরা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
কেননা এই রঙের পোশাক স্কন্দমতার খুবই পছন্দের, আর মায়ের কৃপা পাওয়ার জন্য এই রং আপনার জন্য শুভ ফলদায়ী।
✨ ষষ্ঠীতে যে রঙের পোশাক পরবেন:
দুর্গা ষষ্ঠী, এই দিন বেল গাছ তলায় দেবী দুর্গাকে আরাধনা করা হয়, আর এই দিন থেকেই দেবীর বোধন শুরু হয়ে যায়। ষষ্ঠীর পূজা করা হয়, এই দিন ‘লাল‘ রঙের পোশাক পরা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
এর ফলে মায়ের কৃপা বজায় থাকে আর আপনি আপনার মনের ইচ্ছা পূরণ করতে এই রঙের পোশাক পরতেই পারেন।
✨ সপ্তমীতে যে রঙের পোশাক পরবেন:
মহা সপ্তমী তিথিতে নবপত্রিকা স্নান থেকে শুরু করে পূজা অর্চনা সকলের মন জয় করে নেয়। তবে এই দিন কি রঙের পোশাক পরবেন তা নিয়ে হয়তো অনেকেই চিন্তা করেন।
সপ্তমীর দিন কালরাত্রির পূজা করা হয়, এই দিন মাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘নীল’ রঙের পোশাক পরিধান করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।
✨ অষ্টমীতে যে রঙের পোশাক পরবেন:
মহা অষ্টমী তিথি, পুষ্পাঞ্জলি থেকে শুরু করে সন্ধ্যাবেলা সন্ধ্যা আরতি, সন্ধি পূজা সব কিছু মিলিয়ে এই মহাষ্টমী দূর্গা পূজার একটি বিশেষ শুভ দিন।
অষ্টমীতে মহাগৌরীর পূজা করা হয় এবং ‘গোলাপী’ রং এই দেবীর খুবই পছন্দের। তাই দেবীকে সন্তুষ্ট করার জন্য আপনি এই শুভদিনে গোলাপি রঙের পোশাক পরে মায়ের পূজা করতে পারেন।
মেয়েদের আরও গোলাপী পোশাক দেখুন
ছেলেদের আরও গোলাপী পোশাক দেখুন
✨ নবমীতে যে রঙের পোশাক করবেন:
নবমী তিথি, যা দূর্গা পূজার শেষ বিদায় বেলা বলা যেতে পারে। নববীর দিন মা সিদ্ধিদাত্রী রূপের পূজা করা হয়। আর এই দিন যদি ‘বেগুনি’ রঙের পোশাক পরেন তা অত্যন্ত শুভ।
এই রঙ এর পোশাক পরে মায়ের পূজা করলে এবং কিশোরীদের খাবার খাওয়ালে আপনার পূজার সম্পূর্ণ ফল আপনি পেতে পারেন এবং সকল মনের ইচ্ছা পূর্ণ হতে পারে।
মেয়েদের আরও বেগুনি পোশাক দেখুন
ছেলেদের আরও বেগুনি পোশাক দেখুন
⭐ দুর্গাপূজা শুধুমাত্র ৫ দিনের নয়, নবরাত্রীর সাথে দেবী দুর্গার কি সম্পর্ক সেটা তোমরা সকলেই জানি। এই নয় দিন দেবীর নয়টি রূপের পূজা করা হয়। আর প্রত্যেকটি দিনের গুরুত্ব মাহাত্ম্য আলাদা আলাদা। মহালয়ার পরের থেকেই দেবীপক্ষ শুরু হয়ে যায়, আর তখন থেকেই পূজার সূচনা হয়ে যায়।
শহর কলকাতার প্রায় সমস্ত বড় পূজার উদ্বোধন শুরু হয়ে যায় মহালয়ার পরের দিন থেকে। কোথাও কোথাও মহালয়ার সন্ধে থেকেও শুরু হয়ে যায় দেবীর আরাধনা।
এছাড়া যারা অবাঙালি রয়েছেন তাঁদের জন্য প্রতিপদ অর্থাৎ প্রথনা থেকেই শুরু হয়ে যায় নবরাত্রীর পূজা অনুষ্ঠান, ৯ দিন- রাত ধরে নবমী পর্যন্ত নবরাত্রি পালনের পর বিজয়া দশমীর দিন দশেরা পালিত হয় দেশজুড়ে। শাস্ত্র তে উল্লেখ আছে যে, নবরাত্রির মত দূর্গা পূজাতেও রঙের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
নিয়ম মেনে পূজা করা হয় এবং সেই নয়টি রূপের ভিন্ন ভিন্ন রং মা দুর্গা কে নিবেদনের কথা উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে। আর সেই কারণেই সেই দিন হিসাবে সেই রংয়ের পোশাক পরে দুর্গাপূজায় অংশগ্রহণ করলে দেবী দুর্গা খুশি হয়ে সকলকে আশীর্বাদ দেন।