মুসলিম আইন অনুসারে তিন তালাক কি? কিভাবে হয় তালাক? সবকিছু জানুন

মুসলিম তিন তালাক কি? ইসলাম অনুসারে তিন তালাক কিভাবে হয়? মুসলিম অথবা ইসলাম অনুসারে তিন তালাক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানুন।

মুসলিম আইন অনুসারে তিন তালাক এর মধ্যে দিয়ে একটি বিবাহের সম্পর্ক ছিন্ন করা হয়ে থাকে। যেটা তিন তালাক প্রথা নামে পরিচিত।

মুসলিম আইন অনুসারে তিন তালাক কি? কিভাবে হয় তালাক? সবকিছু জানুন
মুসলিম আইন অনুসারে তিন তালাক কি? কিভাবে হয় তালাক? সবকিছু জানুন

ইসলামের এই তিন তালাক বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকাটা জরুরী। তো চলুন তাহলে জানা যাক, ইসলাম অনুসারে তিন তালাক এর গুরুত্ব: 

ইসলাম অনুসারে বিভিন্ন প্রকারের তালাক: 

১) অতিরিক্ত বিচারযোগ্য তালাক এবং

২) বিচারযোগ্য তালাক।

অতিরিক্ত বিচার যোগ্য তালাক এর মধ্যে তিন রকমের তালাক রয়েছে সেগুলি হল:-

১) স্বামীর দ্বারা তালাক, ইলা এবং জিহার।

২) স্ত্রীর দ্বারা তালাক, ই তাপবেঞ্জ, লিওন।

৩) পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে তালাক।

মুসলিম বিবাহ অধিনিয়ম 1939 এর উৎপত্তি অনুসারে বিচারযোগ্য তালাক দেওয়ার ক্ষেত্রে একজন স্ত্রীর অধিকার আছে।

ট্রিপল তালাক / তিন তালাক আসলে কি?

মুসলিম ইসলাম শরীয়ত অনুসারে সাধারণত তালাক দুই প্রকারের হয়ে থাকে:-

১) তালাক আল এহসান:- এক্ষেত্রে তালাক শব্দটি তিনবার বলা হয়ে থাকে, যা কিনা এক-একবার তালাক বলার জন্য একটি করে মাস অন্তরাল হিসেবে রাখা হয়, অর্থাৎ তিন মাস পর্যন্ত যদি তিন নম্বর তালাক শব্দটি প্রয়োগ করা হয়, সে ক্ষেত্রে তালাক টি সম্পূর্ণ হয়ে যায়।

২) ট্রিপল তালাক অথবা তিন তালাক এক্ষেত্রে এখানেও তালাক শব্দটি ব্যবহার করা হয়, তবে এখানে কোনো রকম অন্তরাল রাখা হয় না অর্থাৎ কোন সময়, মাস দেওয়া হয় না। এক সাথে তিনবার তালাক কথাটি উচ্চারণ করার সাথে সাথে তালাক সম্পন্ন হয়ে যায়।

বাস্তবে এটাই সব থেকে বেশি প্রচলিত যে, খুবই কম সময়ের মধ্যে তালাক সম্পন্ন করার জন্য এই ট্রিপল তালাক অথবা তিন তালাক বিষয়টি রয়েছে।

তিন তালাক ভারতে কেন মানা হয়ে থাকে?

ভারত ছাড়া আরো অন্যান্য দেশে, মুসলিম দেশ গুলোতে এই তালাক এর মামলাতে আইনি কঠোরতার ক্ষেত্রে সংশোধন করা হয়েছে। ভারত যেখানে অভ্যাসের দাস, সকলেই পুরাতন মুসলিম পার্সোনাল ল, আবেদন অধিনিয়ম 1937 এ অনুসারে এই তিন তালাক বিষয়টি জারি রাখা হয়েছে।

যেখানে মধ্যযুগীয় নিয়মকানুন এখনো পর্যন্ত মানা / পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু ধার্মিক আইন এর পর মুসলিম, ইসাই আর হিন্দু সমুদয় এর রক্ষা করার ক্ষেত্রে দেশের নিয়ম কানুন গুলি পুরাতন অনুসারে জারি রাখা হয়েছে।

মুসলিম আইন কি? বিভিন্ন নিয়ম কানুন ও মুসলিম আইনের ঐতিহ্য

ইদ্দত / ইদা বিষয়টি কি ?

ইদ্দত অথবা ইদা হলো কোন সময় সীমা। প্রথম তালাকের পর একটি প্রতীক্ষা সময় দেওয়া হয়। এই প্রতীক্ষা সময়কে ইদ্দত অথবা ইদা বলা হয়ে থাকে, আর এক্ষেত্রে মহিলার পরিস্থিতি সাধারণত তিন মাস ধর্মচক্র এর উপর নির্ভর করে থাকে।

এই সময় সীমা সমাপ্ত হওয়ার পর যখন সেই দম্পতি আবার একসাথে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন, তখন বিবাহ নিয়ম অনুসারে সেই স্ত্রীকে যৌতুক অথবা মোহর নতুন করে দিতে হবে। যদি স্বামী নিজের স্ত্রীকে এই সময়সীমার পর আবার ফিরে না পেতে চান, তাহলে সেই মহিলা অন্য কোনো ব্যক্তির সাথে বিবাহ করতে পারবেন।

হালালা বিবাহ (নিকা হালালা) আসলে কি?

ইসলাম শরীয়ত অনুসারে ইসলামে বেশিরভাগ অংশ কাজ করে থাকে, ইসলাম শরীয়তে ধার্মিক নিয়ম, বিশেষ ভাবে কোরআন শরীফ এবং হাদিস থেকে নেওয়া হয়ে থাকে। যা কিনা মানতে সকল মুসলমান বাধ্য।

শরীয়ত আইন-কানুন অনুসারে যে দম্পতি তালাক এর পরিস্থিতি তে পড়েছেন তারা ততক্ষণ পর্যন্ত পুনর্বিবাহ করতে পারবেন না, যতক্ষন না পর্যন্ত সেই মহিলা অথবা সেই দম্পতির মধ্যে স্ত্রী কোন অন্য ব্যক্তির সাথে বিবাহ না করে থাকেন তো।

আবার এই এই বিবাহ সম্পূর্ণ রূপে সমাপ্ত করে দেওয়া অথবা সেই মহিলার দ্বিতীয় স্বামী মৃত হয়ে থাকেন অথবা তালাক দিয়ে থাকেন, ততক্ষণ পর্যন্ত। এই রকম মামলাতে মহিলাকে বিবাহের মধ্যে দিয়ে তাকে দ্বিতীয় স্বামীর সাথে বিবাহ করা কে হালালা বলা হয়ে থাকে।

মোহরানা বা মোহর কি? তালাকের সময় মোহর দেওয়ার আইনি নিয়ম জানুন

ইসলামে মহিলারা কিভাবে তাদের স্বামীদের তালাক দিতে পারবেন?

এক, তালাক এর মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত শরিয়াত আইন কানুন এর মাধ্যমে করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, মুসলিম বিবাহ অধিনিয়ম 1938 এর অনুসারে সংবিধানিক এর মাধ্যমেও তালাক দেওয়া যেতে পারে, তাছাড়া ব্যক্তিগত শরিয়াত আইন কানুন এর মাধ্যমে তালাক কাজের পরীক্ষা-নিরীক্ষা অথবা অনুসন্ধানের মধ্যে দিয়ে হওয়া প্রয়োজন।

যা কিনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অখিল ভারতীয় মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এ আই এম পি এল বি) এর নিয়ম অনুসারে নির্ধারিত হয়ে থাকে।

তালাক-ই-তাফবেঞ্জ: 

একজন স্বামী তালাক কে কোন তৃতীয় পক্ষ  পর্যন্ত নিজের স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার জন্য নিজের শক্তির প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন, সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ রূপে অস্থায়ী রূপে, শক্তির প্রতিনিধিত্ব করা যেতে পারে।

বিবাহের আগে অথবা তার পর যে চুক্তি করা হয়ে থাকে, সেখানে এটা সুনিশ্চিত করা যেতে পারে যে, স্ত্রীকে সেই স্বামীর নিশ্চিত কিছু শর্ত এর উপর নির্ভর করে তালাক দেওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে সেই শর্ত গুলি যেন যুক্তিযুক্ত হয়ে থাকে।

গ্রহণ অধিকার: 

যদি স্বামী নিজের স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোন বিশ্বাসঘাতকতা অথবা ব্যভিচার এর মিথ্যা দোষ দিয়ে থাকেন, তাহলে এটি চরিত্র হত্যার মামলাতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে। আর স্ত্রী কে এই আধার এর উপর নির্ভর করে তালাক দেওয়ার অধিকার রয়েছে। এই ধরনের তালাককে লিয়ান বলা হয়ে থাকে।

তাছাড়া স্বামীর দ্বারা বানানো বিচার এর কেবল মাত্র একটি স্বৈচ্ছিক আর আক্রমনাত্মক দোষ দেওয়া হয়ে থাকে। যদি সেটা মিথ্যে হয় তাহলে স্ত্রীকে গ্রহণ অধিকার এর আধারের উপর নির্ভর করে তালাকের আদেশ প্রাপ্ত করার অধিকার থাকবে।

মুসলিম বিবাহ অধিনিয়ম 1939 উৎপত্তি: 

কাজী মোহাম্মদ আহমদ কাজমি 17 এপ্রিল 1936 তে এই বিষয়ের উপরে অথবা এই বিষয়ে সম্বন্ধে একটি বিল পাশ করেছিলেন, তাছাড়া 17 ই মার্চ 1939 এর আইন বানানো হয়, আর এইভাবে মুসলিম বিবাহ অধিনিয়ম 1939 এর উৎপত্তি হয়ে থাকে।

অধিনিয়ম এর ধারা 2 অনুসারে চলতি যে বিষয় গুলি রয়েছে সেগুলি কি?

যে সমস্ত বিষয় গুলির উপরে তালাক দেওয়া যেতে পারে, সেগুলি হল:-

১) স্বামীর ঠিকানায় চার বছর পর্যন্ত যাওয়া-আসা না থাকা।

২) স্বামী স্ত্রীকে উপেক্ষিত করছেন এবং দুই বছর পর্যন্ত কোনো রকম খোঁজ খবর রাখেন নি, অথবা রক্ষণাবেক্ষণের কোনরকম প্রকাশ করেননি।

৩) কোন স্বামীর কোনো রকম অপরাধের জন্য সাত বছর অথবা তার বেশি কারাবাস অথবা জেল এর শাস্তি শোনানো হয়ে থাকলে, সে ক্ষেত্রে তালাক দেওয়া যেতে পারে।

৪) স্বামী তিন বছর পর্যন্ত অথবা তার বেশি সময়ের জন্য উপযুক্ত বৈবাহিক দায়িত্ব যদি না পালন করে থাকেন, উচিত কারণ ছাড়া এবং প্রমাণ স্বরূপ কোনরকম উচিত কারণ যদি না দেখাতে পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রে তালাক সম্ভব।

৫) যদি কোনো স্বামী তার স্ত্রীর সাথে খারাপ ব্যবহার এবং মানসিক এবং শারীরিক অত্যাচার করে থাকেন তো।

মুসলিম অথবা ইসলাম অনুসারে তিন তালাক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেটা বিভিন্ন রকম বিষয়ের উপরে নির্ভর করে দেওয়া যেতে পারে। তাছাড়া এর জন্য সময় রয়েছে তিন মাস পর্যন্ত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top