Maha Shivratri 2024: দারিদ্রতা ও অশান্তি দূর করতে বিবাহিতদের জন্য টিপস

বিবাহিত জীবন অনেক সময় অনেক কারণে জটিল হয়ে ওঠে। প্রতিটি মেয়েই চায় তার স্বামী সংসার নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করুক। শিবের মত স্বামী চাওয়ার পাশাপাশি পার্বতীর মত নিজেকেও সেই জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করতে চান।

সংসারের সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় থাকার সাথে সাথে সকল ইচ্ছা পূরণ করার আশা নিয়ে মহা শিবরাত্রির ব্রত পালন করে থাকেন অনেকেই। মহা শিবরাত্রির দিন ভগবান শিব ও পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। এই দিন উপবাস করলে সকলের মনের ইচ্ছা পূরণ হয় বলে জানা যায়। এছাড়াও ভগবান শিব কে গৃহস্থের দেবতা বলে মনে করা হয়।

মহা শিবরাত্রি: দারিদ্রতা ও অশান্তি দূর করতে বিবাহিতদের জন্য টিপস
মহা শিবরাত্রি: দারিদ্রতা ও অশান্তি দূর করতে বিবাহিতদের জন্য টিপস

মেয়েরা ভোলেনাথের পুজো করেন এবং কাঙ্খিত স্বামী পেতে উপবাস পালন করেন। কারণ প্রতিটি মেয়েই চাই যে স্বামী যেন শিব শংকরের মত হয়। এছাড়া একজন সাধারণ মানুষ ভগবান শিবের জীবন থেকে অনেক কিছু শিখতে পারেন। যার সাহায্যে সুখী দাম্পত্য জীবন, সাংসারিক জীবন অতিবাহিত করা যায় আর সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা যায়।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু নীতি ও কৌশল সম্পর্কে যেগুলি স্বয়ং শিব পালন করতেন:

১. প্রিয়:

প্রতিটি বিবাহিত জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সুন্দর একটা সম্পর্ক থাকুক এটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তেমনি শিব ও পার্বতীর প্রেম ছিল, শিব ছিলেন খুবই গরীব, পার্বতী রাজার ঘরের কন্যা হয়েও এমন একজনকে ভালোবেসে বিবাহ করেছিলেন।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে বিয়ের সময় কোন ছেলের ব্যাংক ব্যালেন্স অথবা সৌন্দর্য কে অগ্রধিকার না দেওয়া। বাঘের ছাল পরিহিত শিবের গলায় সাপের মালা দিয়ে পছন্দ করেন পার্বতী। অর্থাৎ সুখে সংসার করার জন্য অর্থ এবং সৌন্দর্য নয়, দুজনের মধ্যে প্রেম, প্রীতি এবং যত্নটাই সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

২. সৎ হওয়া:

স্বামী স্ত্রী যখন উভয় উভয়ের কাছে সৎ হবেন, সমস্ত কথা সত্য কথা বলবেন, সেক্ষেত্রে কোনো রকম বিপদ না আসার সম্ভাবনা বেশি থাকে। প্রতিটি মেয়েই চায় তার জীবনসঙ্গী ভোলেবাবার মতোই শক্তিশালী এবং প্রেমময় হোক।

যাতে তার কোন কথাই উপেক্ষা না করেন। ভগবান শিব পার্বতীকে কতটা ভালবাসতেন তা পৌরাণিক ঘটনা অনুসারে আমরা সকলেই কম বেশি জানি।

এছাড়া স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি দেহ ত্যাগ করেছিলেন। তখন পার্বতীর প্রাণহীন দেহ নিয়ে শিব তান্ডব নৃত্য শুরু করেছিলেন। তবে যদিও পরে দেবতাদের বোঝানোর পর তিনি শান্ত হন এবং পার্বতীর দেহ কে ৫১ টি খন্ডে খন্ডিত করা হয়।

আর সেই খন্ডগুলো যেখানে যেখানে পতিত হয়েছিল সেখানে সেখানে গড়ে উঠেছিল এক একটি পবিত্র সতী পীঠ। তাই দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সৎ হওয়াটা জরুরী।

৩. সমতার অধিকার:

স্ত্রীকে স্বামীর অর্ধাঙ্গিনী বলা হয়। এক্ষেত্রে বোঝাই যায় কতটা একত্রিত হলে এমন একটা কথা উঠে আসে। স্বামী কখনোই স্ত্রী ছাড়া সম্পূর্ণ নন ও স্ত্রীও কখনো স্বামী ছাড়া সম্পূর্ণ নন। মহাদেব হলেন এমন একজন দেবতা, যাকে অর্ধনারীশ্বর বলা হয়।

এর অর্থ হল তার শরীরের অর্ধেক পুরুষ রূপে থাকে, এবং বাকি অর্ধেক নারীরূপে থাকে। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর শরীরের বিচ্ছেদ থাকলেও মন সবসময় একই থাকে। বলা যায় দুটি শরীর একই আত্মা

আজকের অনেক বিবাহিত দম্পতির মধ্যে শুধু মাত্র রাগ, জেদ এর যুদ্ধে দুজনার মধ্যে কে বড় এটাই প্রমাণ করতে গিয়ে অনেক সুন্দর সম্পর্ক বিচ্ছেদে গিয়ে দাঁড়ায়। সেখানে ভগবান শংকর এখানে শিক্ষা দেন যে নারী ও পুরুষ দুজনেই সমান এবং দুজন দুজনকে ছাড়া একেবারেই অসম্পূর্ণ।

৪. একজন ভালো কর্তা:

একটি পরিবার সুন্দরভাবে পরিচালিত করার জন্য একজন সুদক্ষ কর্তা প্রয়োজন পড়ে, পরিবারের প্রধান যিনি তিনি সকলের সুবিধা- অসুবিধা, দায়- দায়িত্ব, সবকিছু নিজে হাতে সামলান।

আর সমস্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সকলের সাথে থাকার পরিবেশ সৃষ্টি করেন। পরিবারের প্রধান যেমন ভিন্ন মত থাকা সত্ত্বেও তার পুরো পরিবারকে একত্র রাখেন। তেমনি শিব ও তার পরিবারকে একত্রে রাখেন।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, শিবের গলায় সাপের মালা থাকে, যা ইঁদুরের শত্রু, ইঁদুর আবার শিবের পুত্র গণেশের বাহন। তা সত্বেও দুজনের মধ্যে কোন শত্রুতা দেখা যায় না। এইভাবে সিংহ হল মা গৌরীর বাহন এবং ষাঁড় হলো ভগবান শিবের বাহন, তারাও একে অপরের শত্রু। তবুও তারা একসঙ্গেই থাকে।

ভগবান শিব এমন একজন দেবতা যিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে যান সর্বত্রই। তাইতো পরিবারের মধ্যে যতই মতবিরোধ থাকুক না কেন, সকলকে এক সুতোয় বেঁধে রাখার দায়িত্ব কিন্তু বাড়ির প্রধান যিনি তিনিই পালন করেন।

৫. অতি সাধারন জীবন যাপন:

একটি পরিবার যখন স্বাভাবিক জীবন যাপন করে, অতি সাধারণ জীবন যাপন করে, তখন সেই পরিবারে কোনরকম অশান্তি থাকে না বললেই চলে। তেমনি শিব ঠাকুরের পরিবার অতি সাধারণভাবে থাকত।

পার্বতী রাজার ঘরের কন্যা হয়েও মহাদেবের মত এত গরীব স্বামীর সাথে সংসার করেছেন সুখে ও শান্তিতে। স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে তিনি অল্পতেই সন্তুষ্ট থেকেছেন। আর কৈলাসে নিজের সাংসারিক জীবনযাত্রা চালিয়েছে। বছরে একবার সন্তানদের নিয়ে তিনি বাপের বাড়িতে আসতেন।

⭐ তবে যাই হোক না কেন, এই সমস্ত বিষয় গুলি প্রতিটি মানুষের জীবনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। হয়তো নিজের কাছে যেটুকু আছে সেটুকু অন্য কারো কাছে স্বপ্ন সমান। অতি আশা, অতি চাহিদা, অতি আকাঙ্ক্ষা, এই “অতি” জিনিস টা শুধুমাত্র কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না। তাই যেটুকু আছে সেটুকু নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করা যায়। জীবনটাকে উপভোগ করা যায় অনায়াসেই।

আর সব থেকে বড় বিষয়, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে অটুট ভালোবাসা, একে অপরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা, তার সাথে সাথে দুজন দুজনকে বোঝাবুঝির মধ্যে দিয়ে সংসার সুখের হয়। সুখের সাথে টাকা পয়সা সম্পর্ক থাকে, এমনটা কিন্তু নয়। মনে করলে প্রিয় মানুষটার সাথে যে কোনো পরিস্থিতিতে হাসিমুখে কাটিয়ে দেওয়া যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top