বাঙালি তথা সকল মানুষের কাছে এই দুর্গাপূজা এমন একটি উৎসব যা সকল মন খারাপ দূরে সরিয়ে দিয়ে আনন্দে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সম্পূর্ণ পরিবেশকে। আরো অন্যান্য পূজা অর্চনার পাশাপাশি দুর্গা পূজাতেও এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলি না করতে পারলে পাপের বোঝা বাড়তে পারে।
বাস্তু শাস্ত্র অনুসারে নবরাত্রি অথবা দেবী দুর্গার আরাধনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই এই বিষয়ে বেশি যত্নবান হওয়াটাও জরুরী। অনেক নিয়ম অনুসরণ করতে হয় যার ফলে পুজোর ফল দ্রুত পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে ঘরে সুখ, শান্তি সমৃদ্ধ বজায় থাকে বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে নবরাত্রিতে অথবা দেবী দুর্গার আরাধনার সময় শাস্ত্র অনুসারে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।
আনন্দ উৎসবের পাশাপাশি বিশেষ বিশেষ কাজের প্রতি খেয়াল রাখাটা সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দেবী দুর্গার আশীর্বাদ প্রাপ্ত করার জন্য সেই কাজগুলি যত কঠিন হোক না কেন তার সহজ করে তোলার অনেক রকম চেষ্টা করে থাকেন অনেকেই।
যে সমস্ত নিয়ম রীতিনীতি মানার ফলে আপনি দেবীর আশীর্বাদ প্রাপ্ত হবেন এবং যদি সেগুলি না মেনে চলেন তাহলে অশুভ লক্ষণ দেখা দিতে পারে বলে মনে করা হয়।
দুর্গাপূজার দিন গুলিতে কোন দিন কোন পোশাক পরবেন? চলুন জানা যাক
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক দুর্গাপূজার সাথে জড়িত এমন কিছু বিধি নিষেধ যেগুলি মেনে চলতে হবে:
১) মূর্তি স্থাপন করার নিয়ম:
শারদীয়া দুর্গাপূজা তে দুর্গা প্রতিমা মণ্ডপে অথবা বনেদি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয় তবে সেই দেবী দুর্গা প্রতিমা অথবা মূর্তি স্থাপন করারও নিয়ম ও রীতি রয়েছে।
এই সময় নবরাত্রিতে উত্তর-পূর্বক কোণে প্রতিমা বা কলস/ঘট স্থাপন করতে হবে, এই দিক টিকে দেবতাদের স্থান বলে মনে করা হয়। আর এইদিকে মূর্তি অথবা কলস বা ঘট স্থাপন করলে ইতিবাচক শক্তির প্রভাব বজায় থাকে যার ফলে সকল মানুষের মন পূজায় মগ্ন থাকে, আর পূজায় কোনো রকম ভুলত্রুটি থাকে না আর থাকলেও তা দূর হয়ে যায়।
আবার এর পাশাপাশি আপনি যদি একটি অবিচ্ছিন্ন শিখা জ্বালিয়ে থাকেন তবে এটি একটি অগ্নিকোণে পোড়াতে হবে, কারণ আগ্নেয় কোণ আগুনকে প্রতিনিধিত্ব করে, এই দিকে অবারিত শিখা জ্বালিয়ে শত্রুদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করা যায় বলে প্রাচীনকাল থেকে রাজাদের এই নিয়ম পালন করতে দেখা গিয়েছে।
দুর্গাপূজা করুন এই নিয়মে আপনার উপর প্রসন্ন হবেন দুর্গতিনাশিনী
২) বাড়ির সদর দরজায় যে কাজটি করবেন:
আমাদের সকলের বাড়ির প্রধান দরজা অথবা সদর দরজা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দরজাটি যত বেশি শুভ দিক দিয়ে রাখা যায় ততই ঘরে শুভ শক্তির আগমন ঘটে।
বাড়ির প্রধান দরজার দু’পাশের চুন ও হলুদ দিয়ে একটি স্বস্তিক চিহ্ন তৈরি করতে হবে পূজার কয় দিন। এর পাশাপাশি আম ও অশোক পাতার তোরণ তৈরি করে সদর দরজার উপরে টাঙিয়ে দিতে হবে। এটি করলে ঘরে শুভ পাপ আসে আর এর ফলে ঘরে ইতিবাচক শক্তি থাকে এবং বাড়ির বাস্তু দোষে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না।
এছাড়া প্রতিদিন সকালে সদর দরজার সামনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে সেখানে জল ছিটিয়ে রাখলেও দেব-দেবীদের আগমনে সুবিধা হয়।
৩) পূজাতে চন্দন বাটার ব্যবহার:
শুধুমাত্র দুর্গাপূজাই নয়, প্রতিটি পূজায় চন্দন বাটার গুরুত্ব কতখানি তা তো আমরা সকলেই কম বেশি জানি। দুর্গা প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করার পর মূর্তি অথবা ঘট স্থাপনের জন্য চন্দনের বাটা ব্যবহার করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়।
ঘট ও মূর্তি চন্দনের চূড়ায় রাখতে পারেন এতে করে বাস্তু দোষ কমে যায় আর চন্দনের প্রভাবে দেবীর পূজার স্থান হয়ে ওঠে ইতিবাচক শক্তির কেন্দ্রস্থল। নিত্য দিনের পূজাতে চন্দন বাটা ও তুলসী পাতার ব্যবহার সম্পর্কে সবাই অবগত রয়েছেন তবে এই দুর্গাপূজার ক্ষেত্রে চন্দন বাটার গুরুত্ব রয়েছে অপরিসীম।
৪) উপাসকের মুখ যেদিকে থাকা উচিত:
দেবদেবীর আরাধনায় উপাসক যিনি রয়েছেন তার মুখ কোন দিকে থাকবে তা নিয়ে রয়েছে এক বিশেষ নিয়ম। সেই নিয়ম মেনে তবেই কিন্তু এই উপাসনা করতে হবে এবং ভক্তি ভরে পূজা অর্চনা করতে হবে।
মায়ের পূজা করার সময় মনে রাখতে হবে যে পুজোর সময় যেন আপনার মুখ পূর্ব বা উত্তর দিকে থাকে। কেননা পূর্ব দিক হলো শক্তি এবং শক্তির প্রতিক, আর এই দিকটির অধিপতি হলেন সূর্য দেবতা। তাছাড়া শাস্ত্র অনুসারে মনে রাখতে হবে যে, সন্ধ্যার সময় প্রদীপ থেকে আলো বা ঘি এর প্রদীপ জ্বালানো খুব শুভ হবে এতে বাড়ির সদস্যের খ্যাতি বাড়ে।
তাই অবশ্যই আরাধনা করার ক্ষেত্রে ভক্ত অথবা আপনার মুখ কোন দিকে থাকবে সে সম্পর্কে যেন ধারণা থাকে আর খেয়াল রাখতে হবে।
এই গাছগুলি দেবীপক্ষের মধ্যে বাড়িতে লাগান মা দুর্গা সকল দুঃখ বিনাশ করবেন
৫) যে রং এড়িয়ে চলতে হবে:
বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে শারদীয় দূর্গা পূজার সময় কালো রংয়ের কাপড় ব্যবহার পরা থেকে বিরত থাকতে হবে, পুজোর সময় কালো রং ব্যবহার করা যাবে না, যা অশুভ বলে মনে করা হয়।
কালো রংয়ের ব্যবহার মনে অপবিত্রতা নিয়ে আসে যা পূজায় মনোযোগ বিঘ্ন ঘটানোর পাশাপাশি আপনার সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি থেকে অনেকটাই দূরে নিয়ে যাবে।
৬) যে রং ব্যবহার করতে পারেন:
শারদীয়া দুর্গাপূজা বিভিন্ন রঙের মেলার উৎসবের মতোই একটি উৎসব। এই উৎসবের রংবেরঙের জামা কাপড় থেকে শুরু করে রঙিন আলো এবং বিভিন্ন রঙের মণ্ডপ সকলের মন কেড়ে নেয়।
শারদীয় দুর্গাপূজাতে দেবী দুর্গার পূজার স্থান থেকে শুরু করে সেখানকার সাজানোর জিনিসপত্র এবং পূজার জন্য লাল রঙের ফুল ব্যবহার করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। লাল রঙকে বাস্তুতে শক্তি বা শক্তির প্রতিক হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং দেবী দুর্গা লাল ফুলে খুব তাড়াতাড়ি প্রসন্ন হয়ে থাকেন।
এর সাথে সাথে মায়ের সঙ্গে সম্পর্কিত জিনিসপত্র যেমন ধরুন রোলি, চন্দন, শাড়ি, কাপড়, ওড়না ইত্যাদি ব্যবহার শুধুমাত্র লাল রং ব্যবহার করতে হবে যা শুভ শক্তির পরিচায়ক।
দূর্গা পূজার সময় এই কাজ গুলি ভুলেও করবেন না, সঠিক পদ্ধতি জানুন
৭) আলপনা অথবা রঙ্গলি:
চারিদিকে শরতের হাওয়া, কাশফুলের মেলা সব কিছুর মাঝে প্রকৃতি যেন আবার নতুন করে সেজে ওঠে দেবী দুর্গাকে আগমন জানাতে। তার পাশাপাশি যদি আপনি নিজের ঘরবাড়ি সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে আলপনা দিয়ে আবীর দিয়ে ফুল এঁকে, ফুল দিয়ে সাজিয়ে যদি রাখেন তাহলে সেই পরিবেশটা দেখতে অনেক সুন্দর হয়।
তবে এই পূজার মৌসুমে আপনার ঘর, পূজার জায়গা, চাল বাটা অথবা আবির দিয়ে সুন্দর আলপনা তে সাজিয়ে দিতে পারেন।
✨ পূজার আরো অন্যান্য নিয়ম মানার পাশাপাশি এই সমস্ত ছোট ছোট নিয়ম এবং খুবই কম খরচের মধ্যে আপনি বহন করতে পারবেন এই নিয়মগুলি পালন করলে আপনার সকল মনস্কামনা পূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় থাকবে সারা জীবন।
বাড়িতে কোন অতিথি আসলে যেমন বাড়ির সকল সদস্যের ভালো লাগার পাশাপাশি সেই নতুন অতিথিরও বাড়ির পরিবেশটা আরো সুন্দর লাগবে। সেই কারণে দেবী দুর্গাকে সন্তুষ্ট করতে আর সমস্ত নিয়ম মানার পাশাপাশি নৈবেদ্য, ফুল, মিষ্টান্ন, পূজার নিয়ম, উপবাস সবকিছু মিলিয়ে নিজেকে ও সাজিয়ে তুলুন রংবেরঙের কাপড় ও পোশাক দিয়ে, তার সাথে সাথে নিজের এবং বাড়ির আরো সকল সদস্যের কথা ও মাথায় রাখাটাও জরুরী।