দেবাদিদেব মহাদেব কে সন্তুষ্ট করতে কত কিছুই না করা হয়। তিনি যেমন শান্ত সকলের ভালো করেন, তেমনি যখন তিনি রেগে যান, তখন মহাপ্রলয় সৃষ্টি করতে পারেন।
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে এই মহা শিবরাত্রি উৎসব পালিত হয়। শিব পূজা করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক কিছুই ভুল কাজ করে ফেলেন ভক্তগণ। সেই ভুলের মাশুল গুনতে হয় সারা জীবন ধরে।
সেই কারণে মহা শিবরাত্রি তে এমন কিছু কাজ রয়েছে যেগুলি একেবারেই করা উচিত নয়। না হলে দেবাদিদেব মহাদেব খুবই অসন্তুষ্ট হবেন আপনার উপর। অনেকেই হয়তো এ বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন না, তবে জেনে নেওয়া যাক, মহা শিবরাত্রিতে কোন কাজ গুলি করা থেকে আপনি বিরত থাকবেন:
যে কাজগুলি মহা শিবরাত্রির দিন আপনি কোনভাবেই করবেন না:
১) পোশাক পরিচ্ছদ:
আপনি যদি এই মহা শিবরাত্রির শুভদিনে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে চান তাহলে এই শুভদিনে কোনরকম কালো রঙের পোশাক পরা একেবারেই যাবে না। এই দিন কালো রঙের পোশাক পরা মানে অশুভ, আর সেই অশুভ লক্ষণে আপনি কখনোই কোন কিছু মঙ্গল করতে পারবেন না।
২) খাওয়া দাওয়া:
যদি আপনি এই দিনে উপোস না করতে পারেন, যদি না থাকেন উপোসে, তাহলে স্নান করার আগে কোন কিছু খাওয়া যাবে না। যদি কিছু খেতেই হয় তাহলে স্নান করে শুদ্ধ হয়ে তবেই খাবেন।
৩) তুলসী পাতা একেবারেই নয়:
যখন আপনি শিবলিঙ্গে জল ঢালবেন সেই সময় তুলসী পাতা কোনভাবেই অর্পণ করা যাবে না, শিবলিঙ্গে দুধ নিবেদনের আগে মনে রাখবেন প্যাকেট দুধ ব্যবহার করবেন না এবং শিবলিঙ্গতে শুধুমাত্র ঠান্ডা দুধই ঢালতে হবে।
৪) দুধের পাত্র:
শিবরাত্রির দিন শিবের মাথায় জল ঢালার পাশাপাশি ডাবের জল, দুধ এই সমস্ত কিছু ঢালা হয়। সে ক্ষেত্রে আপনি যে পাত্র তে করে দুধ নিয়ে যাবেন, সেটি যেন সর্বদাই সোনা, রুপা, অথবা ব্রঞ্জের তৈরি এমন পাত্র হয়। অভিষেকের জন্য কখনো স্টিলের পাত্র ব্যবহার করবেন না।
৫) শিবলিঙ্গের প্রসাদ:
বিশ্বাস অনুসারে জানা যায় যে, ভক্তদের শিবলিঙ্গে দেওয়া প্রসাদ গ্রহণ করা উচিত নয়। কারণ এটি দুর্ভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে। এই কাজ করলে অর্থের ক্ষতি হয় এবং রোগ বালাই সর্বদাই সাথে সাথেই ঘোরে।
৬) শিবরাত্রির উপোস:
শিবরাত্রির দিন শিবকে সন্তুষ্ট করতে উপবাসে থাকেন অনেক ভক্তগন। শিবরাত্রির উপবাস সকালে শুরু হয় এবং পরের দিন সকাল পর্যন্ত চলে। বলতে গেলে সমস্ত একটা দিন আপনাকে অভুক্ত থাকতে হবে। এইদিন ফল ও দুধ খাওয়া যায় যদিও, সূর্যাস্তের পর কিছু খাওয়া উচিত নয়।
৭) যে ফুলগুলি অর্পণ করা যাবে না:
সব ফুল সব দেবদেবীদের পছন্দ নয়। তাই তো যখন আপনি শিবকে সন্তুষ্ট করতে চাইবেন, নিশ্চয়ই তার অপছন্দের কিছু অর্পণ করবেন না, তাই না ! ভগবান শিব কে ভুলেও কখনোই কেতকী ও চম্পা ফুল নিবেদন করবেন না।
কথিত আছে যে এই ফুলগুলি ভগবান শিবের দ্বারা অভিশাপিত হয়েছিল। সাদা হলেও ভোলেনাথের পুজোয় কেতকি ফুল দেওয়া একেবারেই উচিত নয়।
৮) অক্ষত:
অক্ষতর অর্থ হলো অখন্ড তাই শিবের পূজায় ভাঙ্গা চাল দেওয়া উচিত নয়। অক্ষত মানে অখন্ড ধান এটি পরিপূর্ণতার প্রতীক। তাই শিবকে অক্ষত নিবেদন করার সময় খেয়াল রাখুন যেন চাল কোন ভাবে ভেঙে না যায়।
৯) তিন পাতার বেলপত্র:
গাছের পাতা তাই কোনোটা সুন্দর কোনটা পোকা ধরা বা বিকৃত হতেই পারে, তাই যখন শিবলিঙ্গে বেলপাতা অর্পণ করবেন তখন তিন পাতার বেলপত্র অর্পণ করুন। ভাঙ্গা বা বিকৃত বেলপাতা কখনোই অর্পণ করবেন না।
১০) পঞ্চামৃত:
শিবলিঙ্গে পঞ্চামৃত নিবেদন করতে হয়, পঞ্চামৃত মানে হল ১) গঙ্গাজল, ২) দুধ, ৩) মধু, ৪) জাফরান ও ৫) জলের মিশ্রণ। যারা চার প্রহরের পুজো করেন, তারা প্রথম প্রহরে জল দিয়ে, দ্বিতীয় প্রহরে দই দিয়ে এবং তৃতীয় প্রহরে ঘি দিয়ে আর সর্বশেষ চতুর্থ প্রহরে মধু দিয়ে পবিত্র করতে পারেন।
১১) সিঁদুর অর্পণ নয়:
মহা শিবরাত্রি পূজাতে এই বিশেষ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। শিবলিঙ্গে কখনোই সিঁদুরের তিলক লাগাতে যাবেন না। মহা শিবরাত্রিতে আপনি দেবাদিদেব মহাদেব কে খুশি করতে চন্দনের টিকা ব্যবহার করতে পারেন। তবে ভক্তরা দেবী পার্বতী এবং ভগবান গণেশের মূর্তির উপর সিঁদুরের ফোটা লাগাতেই পারেন।
১২) এই খাবার গুলি খাবেন না:
শিবরাত্রি উৎসবে ডাল, চাল বা গমের তৈরি কোন খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। উপবাসের সময় দুধ বা ফল খাওয়া যেতে পারে, সূর্যাস্তের পর কিছু খাওয়া যাবে না।
এই দিনে খুব ভোরবেলায় স্নান করলে শরীর ও মন পবিত্র হয় তাই এই কাজ দিয়ে দিনটি শুরু করুন, নতুন বা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়ে তবেই এই উপবাসের ব্রত গ্রহন করুন।
১৩) রাতে ঘুমানো যাবে না:
শিবরাত্রির উৎসবে বেশিক্ষণ ঘুমানো যাবে না সেটা তো সকলেই কম বেশি জানেন। তবে রাতে কিন্তু ঘুম এড়িয়ে চলতে হবে। রাত্রি জাগরনের সময় ভগবান শিবের স্তোত্র শুনুন এবং আরতি করুন। পরের দিন সকালে স্নান করে প্রসাদ গ্রহণ করে শিব লিঙ্গে তিলক দিয়ে এই উপবাস ভাঙ্গা যেতে পারে।
১৪) নারকেলের জল:
শিবরাত্রির দিন শিবলিঙ্গে ভুল করেও নারকেলের জল ঢালবেন না, এতে দেবাদীদেব মহাদেব আপনার প্রতি রুষ্ট হতে পারেন।
⭐ শিবরাত্রিতে শিবির মতো বর পাওয়ার জন্য এবং দেবাদিদের মহাদেবকে সন্তুষ্ট করে সংসারের উন্নতি ও সুখ, শান্তি বজায় রাখতে এই উপবাস পালন করে থাকেন শিব ভক্তরা। শুধুমাত্র উপবাস থেকে এই পূজা করলেই হবে না।
তার পাশাপাশি এমন কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে, সেগুলি মানতে হবে এবং মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে যে কাজগুলো করতে হয় সেগুলি তো অবশ্যই করতে হবে, তাহলেই দেখবেন আপনার উপবাস ও ব্রত সার্থক হয়েছে।