আমাদের জীবনযাত্রায় সমস্যা আসবে আবার সমস্যা চলেও যাবে। তবে সমস্যা ছাড়া কোন মানুষ নেই। তাই সেটিকে খুব বড় আকারে না দেখে ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রেখে এবং সেই সমস্যার সমাধান যদি খোঁজা যায় তাহলে খুব সহজেই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার জন্য আপনি এই দুর্গাপূজায় আপনার জীবনের সমস্ত সমস্যার কথা দেবী দুর্গাকে জানিয়ে পূজা করতে পারেন। এবং বিশেষ কিছু কাজ করতে পারেন, যার ফলে সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন।
আদি শক্তি দুর্গার রূপ একরকম নয়, তিনি বিভিন্ন রূপে অসুরদের নিধন করেছেন এবং পৃথিবীবাসীকে এবং দেবতা কূল কে সুরক্ষিত করেছেন। তিনি টানা ৮ দিন যুদ্ধ করার পর নবম দিনে মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন। সেই থেকেই তিনি এই পৃথিবীতে পূজিতা হয়ে আসছেন মহিষাসুরমর্দিনী হিসেবে। ভক্তদের দুঃখ, কষ্ট নিবারণ করার জন্য তিনি সর্বদাই ভক্তদের ডাকে সাড়া দেন।
তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এই মহানবমীতে কি করে জীবনের সমস্যা দূরীভূত করবেন:
অষ্টমীর সন্ধি পূজা হওয়া মানেই মহানবমী পড়ে যাওয়া।নবরাত্রীর শেষ দিনে অর্থাৎ নবম দিনে দেবী দুর্গাকে সিদ্ধিদাত্রীর রূপে পূজা করা হয়, নববীর সন্ধ্যেবেলা আরতির পর মন খারাপের সময় চলে আসে, কেননা পরের দিন দেবী দুর্গাকে বিদায় জানাতে হয়। দেবী দুর্গা এই দিন সিদ্ধিদাত্রীর রূপে পদ্ম ফুলের উপরে উপবিষ্ট হয়ে হাতে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম ফুল ধারণ করেন।
এই রূপেই তিনি মহানবমীতে পূজিতা হন। যক্ষ, গন্ধর্ব, কিন্নর, সাপ, দেবদেবী এবং মানুষ সকলেই তাঁর কৃপায় সিদ্ধি লাভ করে থাকেন। আবার অনেকে এই দিন সরস্বতীর রূপ ও মনে করে থাকেন। সরস্বতী রূপে দেবী দুর্গাকেও পূজা করা হয় বলে জানা যায়, কথিত আছে যে নিয়ম অনুসারে দুর্গাপূজা করলে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা লাভ করা যায়। মহানবমীর সন্ধ্যেবেলায় দেবীর মহা আরতি, বলিদান করা হয়, যা সকল ভক্তদের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে এবং সমস্যার সমাধান ঘটাতে পারে।
✨ দেবী দুর্গার অসুর বধের পৌরাণিক কাহিনী:
শাস্ত্র অনুসারে মহিষাসুরকে বধ করার জন্য দেবী পার্বতী দুর্গার রূপ ধারণ করেছিলেন। আর তিনি দশভূজা নামেও পরিচিত, ১০ টি হাতে অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরের সাথে টানা ৮ দিন যুদ্ধ চলার পর মহিষাসুরকে ত্রিশূল বিদ্ধ করেন। মহিষাসুর ছিল এক ভয়ংকর অত্যাচারী ও শক্তিশালী অসুর, যার সঙ্গে যুদ্ধ করা সমস্ত দেবতার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছিল।
কেননা মহিষাসুর বর প্রাপ্ত ছিল যে কোন মানুষ, প্রাণী, দেবতা কেউ তাকে বদ করতে পারবে না। তবে নারী তাকে বধ করতে পারবে এই ভাবেই দেবী দুর্গাকে অসুর বধের জন্য পাঠানো হয়।
অসুর রাজ ও দৈত্য সেনাদের বিশ্বাস হয়ে গিয়েছিল যে তারা এতটাই ক্ষমতাশালী ও সহজে স্বর্গরাজ্য জয় করে পৃথিবী বাসীদের উপর রাজ করতে সক্ষম হবেন। স্বর্গরাজ্যে হানা দিলে সব দেবতারা দেবাদিদেব মহাদেবের কাছে ছুটে যান এবং এই সমস্যা থেকে প্রতিকার চেয়ে প্রার্থনা করেন। সেই সময় মহাদেব জানিয়েছিলেন অসুর কূল কে বিনাশ করার জন্য প্রয়োজন একজন নারী, আর সেটা হলো একমাত্র মহিষমর্দিনী।
তাই আদি শক্তি দুর্গার রূপ ধারণ করে মহিষাসুরের সঙ্গে টানা ৮ দিন যুদ্ধ করে নবম দিনে অর্থাৎ মহানবমীতে মহিষাসুরকে বধ করেন, আর সেই থেকেই দুর্গাপূজা শুরু হয় আর এই দিনের গুরুত্ব অপরিসীম।
✨ মহানবমীর পূজার গুরুত্ব:
মহানবমীর দিন সমস্ত নিয়ম মেনে যদি পূজা অর্চনা করা যায় তাহলে আপনি অবশ্যই মনের মত ফল পাবেন। তবে আপনার মনের চাওয়া যেন সৎ হয় এবং পবিত্র হয়। নিয়ম মেনে দেবীর পূজা করলে সাফল্য, শক্তি ও সম্পদ আসে।
দেবী মহাবিদ্যার আটটি সিদ্ধি দান করেন, সেই কারণে এই দিন সমস্ত ভক্তরা আন্তরিকভাবে ভক্তি দিয়ে তার পূজা করে থাকেন। হিন্দুদের বিশ্বাস যে সমস্ত দেব-দেবীরাও দেবী সিদ্ধিদাত্রীর কাছ থেকে সিদ্ধি লাভ করেছেন।
অপরাজিতা পূজা দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের পরেই কেন করা হয়? জানেন কি?
✨ মহানবমীর তাৎপর্য:
এই শুভ দিনে দেবী সিদ্ধিদাত্রির আরাধনা করলে ভক্তরা দুর্গাপূজার শুভ ফল লাভ করেন, এছাড়াও মহানবমীর এই কারণে পূজা করা হয়, তাতে জীবনের সাফল্য লাভ হয়। অতি সহজে এই শুভদিনে বিশেষ আরতি করা হয়।
এই সেই আরতি, যা করলে জীবনের সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয় বলে জানা যায়। আপনার সকল ইচ্ছা দেবী দুর্গার কাছে জানাতে সন্ধ্যা আরতিতে যোগদান করুন এবং আরতির মধ্যে দিয়ে আপনার মনের সকল ইচ্ছা জানান।
পুরোহিতদের কথা অনুসারে মহানবমীতে ভক্তদের দেওয়া ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮ টি পদ্মফুল, নীল পদ্ম হলে খুবই ভালো তবে তা খুবই বিরল, তাই লাল পদ্ম দিয়ে পূজা করা হয়। এছাড়া নীলকন্ঠ, নীল অপরাজিতা ফুল ও যজ্ঞের মাধ্যমে মহানবমীর বিহিত পূজা হয়ে থাকে।
এছাড়া আরো জানা যায় যে, মহানবমীর দিনে যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হয় ১০৮ টি বেলপাতা, আম কাঠ, ঘি, যজ্ঞ ডুমুরের পাতা দিয়ে এই যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়।
বিজয়া দশমীতে এই নিয়মগুলি মানলে মায়ের কৃপা সর্বদাই থাকবে আপনার উপর
✨ মহানবমীর সন্ধি পূজা:
মহাষ্টমীর শেষ আর মহানবমীর শুরুর সন্ধিক্ষণে শুরু হয় সন্ধিপূজা। বলা হয় যে এই সময় দেবী দুর্গা চামুণ্ডা রূপ ধারণ করে চন্ড ও মুন্ডের বধ করেছিলেন। তাই এই সময় সন্ধি পূজা করা হয় এবং এটি খুবই পূণ্য তিথি বলে জানা যায়। সারা বছর দুর্গাপূজা করার ফল পাওয়া যায় বছরে একবার সন্ধি পূজা করলে।
তাছাড়া সন্ধ্যা বেলা যে আরতি হয়, সে আরতী তে যোগদান করতে একেবারেই ভুলবেন না। আপনার জীবন যদি সমস্যায় জর্জরিত হয়ে থাকে তাহলে এই সন্ধ্যা আরতি তে নিজেকে নিযুক্ত করুন এবং দেবীর কাছে সমস্ত সমস্যার কথা বলুন, অবশ্যই তিনি ভক্তদের সমস্যার সমাধানের পথ দেখাবেন এবং সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনবেন।
দুর্গাপূজা করুন এই নিয়মে আপনার উপর প্রসন্ন হবেন দুর্গতিনাশিনী
নবমী মানেই বিদায় বেলা শুরু, আর এই শুভ তিথিতে এমন অনেক নিয়ম পালন করার পাশাপাশি সন্ধ্যা আরতি এবং সন্ধি পূজাতে যদি অবস্থান করেন তাহলে এটি আপনার জন্য খুবই শুভ ফল দায়ক। প্রতিবছর সকল ভক্তদের মনের বাসনা পূর্ণ করতে মা দুর্গা পৃথিবীতে অবতরণ করেন সপরিবারে। সারা বছর সমস্ত সমস্যা থেকে মুক্ত হয়ে থাকতে আর মনের সকল ইচ্ছা পূর্ণ করতে মহানবমীর এই সন্ধ্যাবেলায় সন্ধিপূজা ও সন্ধ্যা আরতি তে ভক্তি ভরে পূজা অর্চনা করুন।