Makar Sankranti 2024: মকর সংক্রান্তিতে ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি

মকর সংক্রান্তি অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে নতুন ফসল ওঠার পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে শীতকালীন একটি মিষ্টি উৎসব। এই উৎসব যেমন চারিদিকে সবকিছু মিষ্টি মধুর করে তোলে, তেমনি এই উৎসবে রয়েছে অনেক কিছু বিধি নিষেধ এবং নিয়ম কানুন। মকর সংক্রান্তি অত্যন্ত পবিত্র একটি তিথি, এই দিনটি হিন্দুরা বিশেষভাবে পালন করে থাকেন, নানা রকমের আচার, নিয়ম, বিধি মেনে পালিত হয় এই দিনটি।

মকর সংক্রান্তিতে ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি
মকর সংক্রান্তিতে ভুলেও করবেন না এই কাজগুলি

শীত তো চলে এল, আর কয়েকদিন পরেই মকর সংক্রান্তি। এই দিন কিছু বিধি আছে যা অবশ্যই পালন করতে হয় সকলকে। আবার এমন কিছু কিছু জিনিস আছে যা মকর সংক্রান্তির দিন করা কোনমতেই উচিত নয়। এই সম্পর্কে হয়তো অনেকেই অনেক কিছুই জানেন না।

মকর সংক্রান্তি কি?

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, মকর সংক্রান্তি আসলে কি ?

মকর সংক্রান্তি সম্পর্কে অনেকেই তেমন কিছু ধারনা রাখেন না, তবে এক্ষেত্রে জেনে নেওয়া যাক মকর সংক্রান্তি আসলে কি ?  মকর সংক্রান্তির দিন সূর্যদেব নিজের কক্ষপথে মকর রাশিতে প্রবেশ করেন বলে এই দিনটিকে মকর সংক্রান্তি বলা হয়।

এটি বাঙ্গালীর একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উৎসব বলা হয়ে থাকে। গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় অনেক মহিলারা এই দিন বাড়িতে পিঠে পুলি তৈরি করেন। বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি বাঙালি হিন্দু বাড়িতে মিষ্টি, পিঠে পুলি তৈরি হয়।

মকর সংক্রান্তির দিন এমন অনেক বিধি মেনে চলতে হয়, যেগুলি আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে, তার ফলে আপনি শুভ ফল লাভ করতে পারবেন। সূর্যদেবের আশীর্বাদ থাকবে সর্বদাই আপনার এবং আপনার পরিবারের সকল সদস্যের উপর।

মকর সংক্রান্তি কেন পালন করা হয়?

মকর সংক্রান্তি থেকেই কিন্তু সূর্যের উত্তরায়ন শুরু হয়, তাই এই দিনটি বসন্ত ঋতুকে স্বাগত জানানোর দিন হিসেবে সকলেই পালন করে থাকেন। মকর সংক্রান্তি থেকে শুরু হয়ে যায় পরবর্তী ছয় মাস ধরে সূর্যের উত্তরায়ন অবস্থা, তারপর শুরু হবে সূর্যের দক্ষিণায়ন। উত্তরায়নের কাছাকাছি আসে সূর্য। মকর সংক্রান্তির মূল প্রথা হলো গঙ্গাস্নান, অন্নদান এবং মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ খাবার দাবার তৈরি করা।

আমাদের রাজ্যে এই দিন নানা ধরনের পীঠে, পুলি, পায়েস তৈরি করার প্রথা রয়েছে এবং অন্যান্য রাজ্য গুলি তে কোথাও বা দই চূড়া, কোথাও বা খিচুড়ি আবার কোথাও বা গুড় ও তিলের মিষ্টি তৈরি করা হয়ে থাকে। আবার এই দিনটিকে অনেকেই পৌষ পার্বণ হিসেবেই চিহ্নিত করেন।

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, মকর সংক্রান্তির দিন আপনি কি কি করবেন :

১) গঙ্গাস্নান:

মকর সংক্রান্তির দিন প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী নদীতে স্নান করলে অর্থাৎ গঙ্গাস্নান করলে মানুষের জীবনের সকল পাপ, দুঃখ মুছে গিয়ে জীবন হয়ে ওঠে সুন্দর ও সচ্ছল।

তাই মকর সংক্রান্তির এই তিথিতে একেবারেই গঙ্গা স্নান করতে ভুলবেন না অর্থাৎ পুণ্য স্নান করাটা জরুরী। গঙ্গা স্নান সবার পক্ষে সম্ভব না হলেও বাড়িতে ঠাকুর ঘরের গঙ্গাজল থাকলে তা স্নানের জলে মিশিয়ে আপনি গঙ্গা স্নান সম্পন্ন করতে পারেন।

২) সূর্যদেবের পূজা: 

গঙ্গা স্নান করার পর মকর সংক্রান্তির দিন ভক্তরা সূর্যদেবকে পূজা করে থাকেন, বাড়ির কাছাকাছি গঙ্গা না থাকলেও যেকোনো জলাশয় আপনি স্নান করলেও পুণ্য লাভ করতে পারবেন, পুণ্যস্নান এর মধ্যে দিয়ে।

৩) গরিব- দুঃখী মানুষদের দান করুন:

মকর সংক্রান্তির দিন কোন দুস্থ অথবা গরিব মানুষকে আপনার সাধ্যমত খুশি মনে কিছু দান করতে পারেন। এই দিন দান করলে পুণ্য অর্জন করা যায়। এর পাশাপাশি এদিন যদি আপনি খিচুড়ি, শীতের জামা কাপড় এবং তিল দান করেন, তার শুভ ফল পাবেন আর এগুলি দান করার প্রথাও রয়েছে।

৪) নিরামিষ খাবার:

মকর সংক্রান্তির দিন সকালেই ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রথম কিছু খাবার নিবেদন করতে পারেন। তারপর বাড়ির অন্যদের জন্য খাবার পরিবেশন করুন, এর পাশাপাশি এই দিন সাত্ত্বিক অর্থাৎ নিরামিষ খাবার খেতে হবে।

৫) রান্নার মধ্যে তিল:

মকর সংক্রান্তির দিন যে রান্না করা হবে, সেই রান্নার মধ্যে তিল দেওয়ার প্রথা রয়েছে। তিল দিয়ে রান্না করলে এই দিনের শুভ লাভ পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি বাড়ির বড়দের সেবা শুশ্রূষা করলে আশীর্বাদও মেলে।

৬) ভগবান কে পায়েস নিবেদন:

পৌষ সংক্রান্তির দিন অর্থাৎ পৌষ মাসের শেষ দিন হওয়ায় এই দিনে নতুন চাল অথবা নতুন আতপ চাল, খেজুরের গুড়, দুধ দিয়ে পায়েস তৈরি করে ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদন করতে হয়।

তো চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক, মকর সংক্রান্তি দিন আপনি কি কি করা থেকে বিরত থাকবেন:

১) বহুদূর যাত্রা করা যাবে না:

কোন উৎসব অনুষ্ঠানে বাড়ির কোন সদস্য যদি কোথাও দূরে গিয়ে থাকেন তবে উৎসবের আনন্দে বাড়ি ফিরে আসেন। তেমনি মকর সংক্রান্তির দিন খেয়াল রাখতে হবে যে, কেউ যেন দূরে কোথাও যাত্রা না করেন। তবে সেই দিন কেউ কোথাও থেকে নিজের বাড়িতে ফিরে আসাটাই সব থেকে ভালো বলে মনে করা হয়।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায়, এক মুনি এই দিন দূরে কোথাও যাত্রা করেছিলেন। তিনি আর কখনোই বাড়ি ফিরে আসেননি। সেই ঘটনা থেকে এই দিন অর্থাৎ মকর সংক্রান্তির দিন বাড়ির বাইরে যাওয়া কে অশুভ বলে মনে করা হয়।

২) আমিষ রান্না নয়: 

মকর সংক্রান্তির দিন সকলেই বাড়িতে নিরামিষ খাবার তৈরি করবেন, এটা আমরা সকলেই আগে জানলাম। মকর সংক্রান্তির দিন কখনোই ভুলেও বাড়িতে আমিষ অথবা মাছ, মাংস, পিয়াঁজ, রসুন রান্না করা যাবে না।

৩) ঝগড়া-বিবাদ নয়:

শুধুমাত্র উৎসব বলেই নয়, সারা জীবন যদি ঝগড়া-বিবাদ থেকে দূরে থাকেন, জীবন হবে অনেক সুন্দর। তবে এই দিন ভুলেও কিন্তু কোন বয়স্ক মানুষ দের কষ্ট দেবেন না। এই দিন কারো সঙ্গে ঝগড়া বিবাদে জড়াবেন না, আর কোনরকম খারাপ কথা ব্যবহার করবেন না।

৪) ভগবান কে নিবেদন না করে গ্রহণ করা নয়:

কোন পূজাতে যে কোন নৈবেদ্য ভগবানকে নিবেদন করার পরেই তবেই কিন্তু বাড়ির সকল সদস্যরা সেই প্রসাদ গ্রহণ করে থাকেন। তবে মকর সংক্রান্তির দিন ভুলেও ভগবানকে নিবেদন না করে কোন কিছু গ্রহণ করা যাবে না।

৫) পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:

মকর সংক্রান্তির দিন ঘর বাড়ি খুবই সুন্দর ভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে রাখতে হবে। এর ফলে সংসারের আয় উন্নতি যেমন আসবে, তেমনি লক্ষ্মী বিরাজ করবেন সর্বদাই।

৬) মকর সংক্রান্তির দিন বাড়ির মহিলারা চুলের শ্যাম্পু করবেন না, তার পাশাপাশি এই পূর্ণ তিথিতে দাঁত পরিষ্কার করতে নেই। গাছ কাটাও এই সময় নিষিদ্ধ, সংক্রান্তির দিনে সিগারেট, মদ ইত্যাদি সেবন করা থেকে দূরে থাকতে হবে।

৭) এছাড়াও কোনরকম মশলাদার খাবার খাওয়া যাবে না। আবার গরু অথবা মোষের দুধ দোয়াও যাবে না। ভাষায় থাকতে হবে নিয়ন্ত্রণ, রাগ করা যাবে না অকারণ, সংক্রান্তির দিনে স্নান করার আগে চা পান করা যাবে না।

৮) এই দিন গঙ্গা স্নানের পর লোহা, স্টিল অথবা প্লাস্টিকের পাত্রে সূর্যদেবকে জলের অর্ঘ্য দেওয়া যাবে না। তামার পত্র ব্যবহার করতে হবে। নোংরা জামা কাপড় পরা যাবে না, এর পাশাপাশি মকর সংক্রান্তিতে তুলসী পাতা কখনোই তুলবেন না।

মকর সংক্রান্তি অথবা পৌষ সংক্রান্তির গুরুত্ব:

প্রতিটি উৎসবের কোন না কোন গুরুত্ব, তাৎপর্য থাকেই। সেই অনুসারে সেই উৎসব গুলি খুবই জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে এবং ভক্তিভরে পালন করা হয়। শাস্ত্র মতে দক্ষিণায়নের ছয় মাস দেবতাদের রাত ও উত্তরায়নের ৬ মাস দেবতাদের দিন হিসেবে ধরা হয়।

তাই উত্তরায়নকে শুভ প্রকাশ স্বরূপ ধরা হয়। আর অন্যদিকে দক্ষিণায়নকে অন্ধকার ও অশুভর প্রতীক বলে মনে করা হয়। তাই উত্তরায়নের যেকোনো শুভ কাজ করা যেতে পারে।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় যে যশোদা মকর সংক্রান্তির দিন উপবাস রেখেই ভগবান কৃষ্ণ কে সন্তান রূপে পেয়েছিলেন। গীতায় বলা হয়েছে যে উত্তরায়নের সময় দেহত্যাগ করলে ব্যক্তির আর পুনর্জন্ম হয় না অন্যদিকে দক্ষিণায়নের সময় দেহ ত্যাগ করলে ব্যক্তিকে আবার জন্মগ্রহণ করতে হয়।

এছাড়া মকর সংক্রান্তির দিন যেহেতু দেবতারা মর্ত্যে নেমে আসেন, তাই মকর সংক্রান্তির দিন যদি কেউ দেহত্যাগ করেন, তিনি স্বর্গলোকে প্রবেশ করেন সরাসরি। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ভীষ্ম বাণ বিদ্ধ অবস্থাতেও দেহত্যাগ করেননি কিন্তু, কারণ তখন দক্ষিণায়ন চলছিল। তার ইচ্ছা মৃত্যুর বর থাকায় তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, উত্তরায়নের মকর সংক্রান্তির দিন দেহ ত্যাগ করবেন। আর তিনি এমনটাই করেছিলেন।

মকর সংক্রান্তির দিন সূর্যদেব শনিদেবের সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তাই এই দিন সূর্য দেবের প্রভাবে শনি দুর্বল হয়ে পড়ায় মকর সংক্রান্তির দিন শনি জনিত সমস্ত রকম দোষ ত্রুটি দূর হয়ে যায়। আর সেই অনুসারে মকর সংক্রান্তি সকল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে একটি বিশেষ পার্বণ ও তিথিও বলা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top