Maha Navami 2023: মহানবমী পূজা বিধি ও পদ্ধতি জেনে নিন

মহানবমী মানেই দুর্গোৎসব শেষের পর্যায়ে। এই দিনটি থাকে মন একেবারে ভারাক্রান্ত, কোনভাবেই এই দিনকে বিদায় জানাতে ইচ্ছা করে না। সারা বছর ধরে যে উৎসবের জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি তার বিদায় ঘন্টাটা বাজিয়ে দেয় এই মহানবমীর রাত। তাই নবমী নিশিকে আমরা সবাই ধরে রাখতে আগ্রহ জানাই।

কিন্তু তাও নবমী পূজার গুরুত্ব তো আছেই, আছে সেই পূজা করার পর ফলের আকাঙ্ক্ষাও, তো চলুন জানা যাক মহানবমীর পূজার বিধি ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে।

মহানবমী পূজা বিধি ও পদ্ধতি জেনে নিন
মহানবমী পূজা বিধি ও পদ্ধতি জেনে নিন

দুর্গা ষষ্ঠী, মহা সপ্তমী, মহা অষ্টমী, মহানবমী এই মহানবমীতে আরো অন্যান্য শুভদিনের মত ও বিশেষ পূজা অর্চনা রীতি প্রচলিত রয়েছে এবং মেনে চলতে হয় এমন কিছু নিয়ম যার ফলে দেবীর আশীর্বাদ বর্ষিত হয় পৃথিবীবাসীর উপরে। আমাদের আনন্দ উৎসব, আলোর রোশনাই, সব কিছুর অবসান ঘটতে চলেছে এই মহানবমীর নিশি পেরিয়ে গেলেই। আর এই মহানবমীর তিথিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, রয়েছে মাহাত্ম্যও।

শুভ নবমী শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক মহানবমী তিথির কিছু বিশেষত্ব এবং মাহাত্ম্য:

মহানবমী তিথির বিশেষ গুরুত্ব:

সারা বছর এমন নবমী তো অনেক আছে, আমাদের সমস্ত তিথি নক্ষত্র হিসাব করা হয় চন্দ্রের অবস্থানকে লক্ষ্য করে। সেই অনুযায়ী মাসের ৩০ দিনকে শুক্লপক্ষ ও কৃষ্ণপক্ষ এই দুই পক্ষে ভাগ করা হয়। মহানবমী এই শুক্লা নবমী যাকে শাস্ত্রে বলে “উগ্রপদা”।

নবমী তিথিতে মানুষের উত্তেজনা বাড়ে অর্থাৎ মানুষের মধ্যে অপরাধের প্রবণতা বেড়ে দ্বিগুণ হয়। অশুভ শক্তির দিকে মানুষ নবমীতে বেশি ঝুঁকে যায় কিন্তু এই অশুভ কে বিনাশ করে শুভ শক্তির আবির্ভাব ঘটাতে আমরা সেই দেবী দুর্গারই স্মরণ করে থাকি। যিনি অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটান। তাই এই মহানবমী কে অন্য নবমী তিথির মধ্যে শুভ ধরা হয়।

জপ, তপ, উপাসনা এইসব এই তিথিতে বেশি করে করতে বলা হয়, যাতে মন থাকে শুদ্ধ আর কোন খারাপ কাজে মন যেন সে দিকে ঢলে না পড়ে।

মহানবমীর দিন এই বিশেষ আরতি করে জীবনের সমস্ত সমস্যা দূর করুন

মহানবমীর পূজা বিধি:

মহানবমীর পূজা বিধি একটু জটিল বলা যেতে পারে, কেননা দুর্গাপূজার সমস্ত দিনের পূজা বিধির মধ্যে এই দিনের পূজা বিধি টা একটু অন্যরকম, তবে নিচে এর কিছুটা আলোচনা করা হলো:-

১) সন্ধি পূজা:

আমরা আগেই জেনেছি অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির শুরুর ২৪ মিনিট এই মোট ৪৮ মিনিট ধরে সন্ধি পূজার অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

নবমী শুরু হয় সন্ধি পূজা দিয়ে আমরা সবাই জানি যে সন্ধিপূজা হয় অষ্টমী তিথির আর নবমী তিথির শেষ ও শুরুর সন্ধিক্ষণে। মূলত দেবী চামুন্ডার পূজা হয় এই সময়ে।

১০৮ টি মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে এবং ১০৮ টি পদ্মফুল নিবেদন করা হয় দেবীর চরণে। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, সন্ধি পূজা এবং দুর্গাপূজার জন্য নিবেদন করা হয় রান্না করা এবং কাঁচা শাকসবজি, ফল, ফুল, নৈবেদ্য এবং ভোগ।

সন্ধিপূজায় লাগে ১০৮ টি লাল পদ্ম ও ১০৮ টি প্রদীপ, কেন জানেন?

২) পুষ্পাঞ্জলি:

এই অঞ্জলি দেওয়ার নিয়ম টি মূলত অষ্টমীতে করা হয়। সেটাই কিন্তু প্রশস্ত, কিন্তু নবমীতেও অঞ্জলি দেওয়া হয়ে থাকে। আসলে অষ্টমী এই কদিনের তুঙ্গ মুহূর্ত বলেই এই দিনে সাধারণত দেওয়া হয় অঞ্জলি।

নবমীর অঞ্জলি দেওয়ার আলাদা কোন নিয়ম নেই, সবটাই কিন্তু অষ্টমীর অঞ্জলির মতোই হবে। তবে তিনবার পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে প্রণাম করতে হয়, আর সেখানে প্রণাম মন্ত্র হল “ওম সর্ব মঙ্গল মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে শরণ্যে তম্ব্যকে গৌরী নারায়নী নমস্তুতে”।

শুভ সন্ধি পূজা শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

৩) হোম ও যজ্ঞ:

প্রতিটি পূজায় হোম ও যজ্ঞের গুরুত্ব অপরিসীম। তেমনি মহানবমীর এই শুভ দিনে হোম যজ্ঞের মাহাত্ম্য রয়েছে। নবমীতে মূলত হোম হয়ে থাকে, ব্যতিক্রমী নিয়ম ও থাকতে পারে মূলত ২৮ টা বা ১০৮ টা নিখুঁত বেলপাতা লাগে, বালি দিয়ে যজ্ঞের মঞ্চ তৈরি করতে হয়, বেলকাঠ ঠিকঠাক ভাবে নিয়ম মত সাজিয়ে পাটকাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে ঘি এর মধ্যে বেলপাতা গুলি ডুবিয়ে যজ্ঞ কুন্ডে নিবেদন করতে হয়।

এরপর সবার শেষে একটি কলা চেলিতে বেঁধে পান নিয়ে সেটা ঘি এর মধ্যে ডুবিয়ে পূর্ণাহুতি দেওয়া হয়। তারপর তার মধ্যে দই দেওয়া হয় ও দুধ দিয়ে আগুন নেভানো হয়। আর এই ভাবেই যজ্ঞ সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি নবমী তিথির পূজাও সম্পন্ন হয়ে যায়।

দুর্গাপূজার দিন গুলিতে কোন দিন কোন পোশাক পরবেন? চলুন জানা যাক

মহানবমীর তাৎপর্য:

মহানবমী পূজায় তাৎপর্য রয়েছে, তবে এই তাৎপর্য নিয়েও রয়েছে নানা মুনির নানা মত। তবে হিন্দু পুরাণ অনুসারে মা দুর্গা মহিষাসুরকে দশমীতে বধ করেছিলেন। তাই সেই দিক থেকে দেখতে গেলে যুদ্ধের শেষ দিন হলো নবনী অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণের সন্ধি পূজার সময় মা দুর্গা মহিষাসুরকে ত্রিশূল বিদ্ধ করে বধ করেছিলেন।

শাস্ত্রমতে এই দিন দেবীর পূর্ণাঙ্গ পূজা করা হয়। এছাড়া অনেকেই মনে করে থাকেন যে, বলি দেওয়া রীতিটি সাধারণত অষ্টমীতেই পালিত হয়। কিন্তু না বলিদান এর রীতিটি কেবলমাত্র নবমীতেই সঞ্চারিত হয়।

প্রাচীনকালে মহিষ বলি দেওয়ার রীতি প্রচলিত থাকলেও বর্তমানে সেটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়ে এখন বিভিন্ন ধরনের মাসকলায় বলি দেওয়া হয়। কিন্তু এখনো অনেক জায়গায় মহিষ বলি দেওয়ার রীতি প্রচলিত রয়েছে, তবে তা খুবই সীমিত।

প্রাচীন যুগে এই দিনে মায়ের কাছে পশু বলি হলেও বর্তমান দিনে পশুবলি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই এখন কুমড়ো, লাউ, আঁখ, শসা অথবা কলা ইত্যাদি ফল ও সবজি বলিতে ব্যবহার করা হয়।

দুর্গাপূজা উপলক্ষে আপনার ও পূজার ঘরটিকে সাজান এই পদ্ধতিতে

কুমারী পূজা এবং ভোগ নিবেদন:

কিছু কিছু জায়গায় মহা অষ্টমীর পরিবর্তে মহানবমীতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান কুমারী পূজা দেখার জন্য। ঘরের মায়েরা পরিবারের মঙ্গল কামনায় উপবাস পালন করেন এবং পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে থাকেন, এই দিন বহু মণ্ডপে চলে ভোজন। পুজো উদ্যোক্তারা লুচি, খিচুড়ি ও ফল প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করেন।

সেখানে আগত সকলের মধ্যে নবমীর সর্বশেষ আকর্ষণ হল সন্ধ্যা আরতি এবং ধুনুচি নাচ। অংশগ্রহণ করে থাকেন সেখানে স্থানীয় অনেকেই, ছেলে-মেয়ে উভয়ই থাকতে পারেন।

তবে একটা কথা উল্লেখ্য যে দুর্গাপূজা এমন একটি উৎসব যা শুধুমাত্র বাংলাতেই নয়, ওড়িশা, বিহার, অসম, ঝাড়খন্ড এবং ত্রিপুরাতেও বেশ জাকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয় এই শারদীয়া দুর্গোৎসব।

দুর্গাপূজা করুন এই নিয়মে আপনার উপর প্রসন্ন হবেন দুর্গতিনাশিনী

⭐ পূজার প্রত্যেকটি দিনে আমিষ গ্রহণ না করা গেলেও এই দিনে অনেকেই বাইরে কোথাও খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে থাকেন এবং সেখানে আমিষ খাওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করা যায়। ভুরিভোজ বলতে গেলে এই নবমীর দিনটি, সম্পূর্ণ পূজা অনুষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম।

এছাড়া পূজার কয়েক দিন সকলেই বাড়ির বাইরে খাওয়া-দাওয়া সেরে নেওয়ার কাজটি করে থাকেন। ঘরেতে খুব কমই রান্না হয়, তবে মহানবমীর এই দিনে বিভিন্ন বিধি নিষেধ থাকার পাশাপাশি মনকে রাখতে হয় শান্ত। কারো সাথে কোন খারাপ ব্যবহার না করা থেকে শুরু করে কোন খারাপ কাজে লিপ্ত না হলেই দেবী দুর্গা আপনাদের উপরে সন্তুষ্ট থাকবেন সর্বদাই।

মন খারাপের দিন হলেও এই দিনটাকে উপভোগ করতে ভোলেন না সকলেই। বিজয়া দশমীর শেষ দিন সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে মাকে বিদায় জানাতে হয়, আবার অপেক্ষা করতে হয় একটা বছর। মন খারাপ থাকলেও হাসি কান্নার মধ্যে দিয়ে, ঢাকের তালে, আনন্দ উৎসবের মধ্যে প্রতিমা বিসর্জনে অংশগ্রহণ করেন অগণিত মানুষ।

মহানবমীর পূজা বিধি সম্পর্কিত জানলেন এই দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। আনন্দ উৎসব সকলের সাথে ঘুরতে বেড়ানো আত্মীয়-স্বজনদের সাথে দেখা করা একসাথে খাওয়া দাওয়া সবকিছু মিলিয়ে পূজার এই আনন্দের দিনগুলি সকলের খুবই সুন্দর ভাবে কাটুক।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top