আপনি কি জানেন দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার বাচ্চাদের আইনি অধিকার সম্পর্কে? দ্বিতীয় স্ত্রী ও বাচ্চারা কি কি পেতে পারে? আসুন জেনে নিন দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার বাচ্চাদের আইনি অধিকার।
ভারতীয় আইনে দ্বিতীয় বিবাহ এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু আইন-কানুন রয়েছে। এই উদ্দেশ্যে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা 494 তে প্রথম স্ত্রী থাকা সত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করা দন্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
এর মধ্যে দিয়ে এটা প্রমাণিত হয় যে, একটি স্ত্রী থাকাটা আইন সিদ্ধান্ত অনুসারে সবাইকে জানিয়েছে যে, একটি মাত্র স্ত্রী থাকা সবথেকে ভালো। এরপর ভারতে কিছু প্রথা অন্তর্গত দ্বিতীয় বিয়ের মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
আইনের নিষেধ করার পরেও দ্বিতীয় বিবাহ করার অনেক রকম কারণ সামনে এসেছে। এখন যখন দ্বিতীয় বিবাহ সম্পর্কিত বিষয়টি সমাজে প্রকট হয়েছে, তখন যে মেয়েকে দ্বিতীয়বার বিবাহ করা হবে অথবা যে মহিলাকে দ্বিতীয়বার বিবাহ করা হবে, সেই মহিলার কি কি আইনি অধিকার হওয়া জরুরী আর তার যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে তাদের অধিকার কি হবে?
যদি কোন ব্যক্তির প্রথম স্ত্রী মারা গিয়ে থাকেন তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই সেই স্ত্রীর থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তখন আইন দ্বিতীয় বিবাহ করার উপরে কোন রকম অপরাধ মনে করে না। কেননা যেহেতু প্রথম স্ত্রী মারা গিয়েছেন তাই দ্বিতীয় কোনো মহিলাকে বিবাহ করলে তাকেই প্রথম স্ত্রীর জায়গাতে বসানো যাবে।
কিন্তু এমন পরিস্থিতি যদি হয়, যেখানে প্রথম স্ত্রী জীবিত আছেন এবং সেই স্ত্রীর কাছ থেকে ডিভোর্স নেওয়াও হয়নি, তার পরেও কোনো ব্যাক্তি যদি দ্বিতীয় বিবাহ করে থাকেন, সে ক্ষেত্রে সেই মহিলাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে পরিচিত করা যেতে পারে।
এমন দ্বিতীয় বিবাহ হিন্দু মেরেজ অ্যাক্ট 1955 আর বিশেষ বিবাহ অধিনিয়ম 1956 দুই ক্ষেত্রে অন্তর্গত অবৈধ হয়ে থাকে। তাছাড়া একে শূন্য বিবাহ হিসাবে মানা হয়। তাছাড়া এমন বিবাহ সাধারণত এই জন্যই শুন্য মনে করা হয়, কেননা এর কোন অস্তিত্বই নেই।
কিন্তু আইন এই মামলা তে একজন মহিলা আর বাচ্চার প্রতি অধিকার হিসেবে আইন খুবই উদার’ হয়ে থাকে। কেননা বাচ্চা প্রকৃতির দান, যেকোনো বাচ্চা জন্মগ্রহণ হওয়ার ক্ষেত্রে সেই বাচ্চার কিন্তু কোনোরকম হাত থাকে না, আর না তো তার কোন নির্ণয় করা হয়। যদি কোন অবৈধ বিবাহ থেকে কোন বাচ্চা জন্ম নেয়, তখন সেই বাচ্চাকে কোনভাবেই দোষ দেওয়া যাবে না, অথবা শাস্তি দেওয়া যাবে না।
দ্বিতীয় স্ত্রীর অধিকার:
যদি প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করা হয়ে থাকে, তখন এমন স্ত্রী কে দ্বিতীয় স্ত্রী বলা হয়। এছাড়া এই দ্বিতীয় স্ত্রীকে আইন কিছু অধিকার দিয়ে থাকে, যেমন ধরুন স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ প্রাপ্ত করার অধিকার আছে, কিন্তু স্বামীর অর্জিত সম্পত্তি অথবা তার পৈতৃক সম্পত্তির অংশীদার হিসেবে কোনরকম অধিকার থাকবে না, আইন সেই অধিকার দেয়নি।
এখানে একটি কথা খেয়াল রাখতে হবে যে, দ্বিতীয় স্ত্রীর সম্পত্তিতে কোন রকমের অধিকার থাকবে না। যদি তার স্বামীর মৃত্যু হয়ে যায়, আর তার স্বামী কোন সম্পত্তি নিজে থেকে অর্জিত করে থাকেন অথবা আপনার স্বামীর যদি তার পৈতৃক সম্পত্তিতে কোনরকম অংশ মিলে থাকে, তখনো কিন্তু সেই দ্বিতীয় স্ত্রীর কোনরকম অধিকার থাকবে না।
এমনটা হতে পারে, সেই ব্যাক্তি জীবিত অবস্থায় কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর নামে কোন সম্পত্তি যদি লিখে দিয়ে থাকেন, সেটাও করা যেতে পারে। কিন্তু যদি কোনরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়াই ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার স্ত্রী বিচারালয় এ এই অভিযোগ করতে পারবেন না যে, সেই দ্বিতীয় স্ত্রী উত্তরাধিকারী আছেন।
দ্বিতীয় স্ত্রীকে কোনভাবেই উত্তরাধিকারী হিসেবে মনে করা হয় না। যদি সে দ্বিতীয় স্ত্রী হয়ে থাকেন, তখন স্বামীর উত্তরাধিকার তার প্রথম স্ত্রীর পাওনা হবে। যিনি ব্যক্তির প্রথম স্ত্রী এবং যাকে বৈধ স্ত্রী হিসেবে আইন বিবেচনা করে।
ভরণ-পোষণের চাহিদা রাখতে পারে:
দ্বিতীয় স্ত্রী এর মামলাতে আইন কিছুটা হলেও উদার আছে, দ্বিতীয় স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে ভরণ-পোষণের অধিকার পেতে পারেন। যে কোনো দ্বিতীয় স্ত্রী যদি নিজের স্বামীর থেকে আলাদা বসবাস করেন, আর এমন আলাদা থাকার কারণ যদি যুক্তিযুক্ত হয়, তখন দ্বিতীয় স্ত্রী বিচারালয় ভরণ-পোষণের জন্য মামলা মোকদ্দমা চালাতে পারেন।
এমন ভরণপোষণের জন্য মামলা দণ্ডবিধান 1973 এর ধারা 125 তে অন্তর্গত আইন অনুসারে আনা হয়েছে অথবা অত্যাচার অধিনিয়ম এর ধারা 12 এর অন্তর্গত আনা হয়েছে অথবা হিন্দু মেরেজ অ্যাক্ট এর অন্তর্গত তে আনা হয়েছে।
এই তিনটি আইন ভরণ-পোষণ এর সম্বন্ধে বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সহায়তা করে। সাধারণত এই আইন অনুসারে মানুষ ভরণপোষণের চাহিদা পুরন করেন অথবা ভরণপোষণ চাইতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দ্বিতীয় স্ত্রী ও এই ধারার অন্তর্গত ভরণপোষণের জন্য আদালতের কাছে অভিযোগ করতে পারেন।
দ্বিতীয় স্ত্রীর বাচ্চাদের অধিকার:
যদি কোন ব্যক্তি তার প্রথম স্ত্রী জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাকে ডিভোর্স না দিয়ে দ্বিতীয়বার বিবাহ করে থাকেন, আর সেই দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান হয়ে থাকে, তার জন্য আইন বেশকিছু অধিকার রেখেছে। এছাড়া বলা যেতে পারে যে, আইন বাচ্চাদের কোন রকম শাস্তি দেওয়ার জন্য নয় বা শাস্তি দেওয়ার কথা ভাবতেই পারে না।
একটি ছেলে সন্তান জন্ম হওয়ার পর অথবা একটি মেয়ে সন্তান জন্ম হওয়ার পর সেই বাচ্চাদের বৈধ সন্তান হিসাবে যে অধিকার পাওয়া যায়, সেই অধিকার কিন্তু তাদের দিতে হবে। যেমনভবে একজন সন্তান তার পিতার সম্পত্তির অধিকারী হয়ে থাকেন, সেই ভাবে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাচ্চারাও কিন্তু সমত্তির অধিকার পাবে।
যদি সেই ব্যক্তি কোনরকম সম্পত্তির ভাগাভাগি না করে মারা যান, তাহলে দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তার সন্তানরা আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেন সেই ভাবে, যে ভাবে প্রথম স্ত্রী এবং তার বাচ্চারা মামলা দায়ের করতে পারবেন, সেই অধিকার কিন্তু রয়েছে।
পৈতৃক সম্পত্তিতে দ্বিতীয় স্ত্রী এবং বাচ্চাদের অধিকার:
দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তার বাচ্চাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে তেমনি অধিকার থাকবে, যেমনটা অধিকার রয়েছে প্রথম স্ত্রী এবং তার বাচ্চাদের। শুধুমাত্র এটুকুই তফাৎ, তাদের পিতার পৈতৃক সম্পত্তিতে কোনরকম অংশ মিলেছিল আর পিতার মৃত্যু হয়ে গিয়েছে তখন কিন্তু সেই অংশের চাহিদা রাখতে পারবে, তাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে পাওয়া অংশতেও উত্তরাধিকার থাকে।
দ্বিতীয় স্ত্রী এর বাচ্চারা সম্পত্তির উত্তরাধিকারের সাথে সাথে ভরণপোষণের অধিকারও চাইতে পারে। তারা তাদের পিতার থেকে ভরণপোষণ নেওয়ার অধিকারী থাকবে।
দ্বিতীয় স্ত্রী এর সৎ বাচ্চাদের অধিকার:
অনেকবার এটা হয়ে থাকে যে, কোন ব্যক্তি কোন মহিলাকে বিবাহ করেছেন, সেই মহিলা আগে থেকেই বিবাহিতা ছিলেন এবং সেই মহিলার আগের স্বামীর সন্তানও রয়েছে। সেই মহিলার কাছে এমন বাচ্চা সেই মহিলার বর্তমান স্বামীর জন্য সৎ বাচ্চা হিসেবে পরিচিত হয়।
এমন সৎ বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তির সম্পত্তিতে কোনরকম অধিকার থাকে না। তাদের আসল বাবার কাছ থেকে সম্পত্তির অধিকার পেতে হবে।
সৎ বাবার কাছ থেকে কোনো রকমের অধিকার পাওয়া যাবে না। তবে যদি বর্তমান স্বামী আইন অনুসারে সেই মহিলার আগের স্বামীর সন্তানদের দত্তক নিয়ে থাকেন, তখন কিন্তু বর্তমান যে সৎ পিতা রয়েছেন, তার সম্পত্তিতে অধিকার পেতে পারে সেই সমস্ত বাচ্চা।
এমন পরিস্থিতিতে সেই মহিলাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, যখন সেই মহিলা তার স্বামীকে ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন ব্যক্তিকে বিবাহ করছেন সে ক্ষেত্রে সেই মহিলার আগেই সন্তান রয়েছে, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে যে, বর্তমান স্বামীর কাছ থেকে তার সন্তানের কোনো রকম অধিকার মিলবে না। এক্ষেত্রে আইন অনুসারে কোন রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
তা না হলে বাচ্চার সম্বন্ধে কিন্তু অন্যায় করা হবে। এমন বাচ্চার জন্য ভরণ-পোষণ সেই বাচ্চার আগের বাবার কাছ থেকে পেতে হবে। সৎ বাবা ভরণ-পোষণের কোনরকম দায়িত্ব নেবেন না। আর না তো বাবার পৈতৃক সম্পত্তিতে এই সমস্ত বাচ্চাদের কোন অধিকার হবে।