Durga Puja 2023: কল্পারম্ভ কি? বোধন থেকে সন্ধি পূজা সবকিছু জানুন

মহা শক্তির আরাধনার কথা বলতে গেলে আমরা দুর্বোৎসব কে বিশেষভাবে মনে করে থাকি। সারা বছর শেষে যখন দুর্গোৎসব আমাদের দোরগোড়ায় চলে আসে তখন কিন্তু কয়েকটা দিন আনন্দের কোন সীমা থাকে না। চারিদিকে সুন্দর এক হিমেল হাওয়ার সাথে সাথে দেবী বন্দনা থেকে শুরু করে দেবীর বোধন, সন্ধি পূজা এবং আরো অন্যান্য অনুষ্ঠান সূচির ভিতরে সকল বাঙালির মন একেবারে পুজো পুজো গন্ধ তে মেতে ওঠে।

শুভক্ষণ থেকে শুরু করে নির্দিষ্ট একটি সময়ে প্রতিটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়, মহাসক্তির আরাধনা বলে কথা, তাই না! তাই নির্দিষ্ট নির্ঘণ্ট মেনে পালন করতে হয় নির্দিষ্ট আচরণ অনুষ্ঠান, একটু এদিক ওদিক হওয়ার কোন উপায় নেই। তাহলেই নেমে আসতে পারে ঘোর বিপদ, দূর্গা পূজার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত গুলি জানতে গেলে আমাদের সঠিকভাবে তার রীতিনীতি সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।

কল্পারম্ভ কি? বোধন থেকে সন্ধি পূজা সবকিছু জানুন
কল্পারম্ভ কি? বোধন থেকে সন্ধি পূজা সবকিছু জানুন

মহাষষ্ঠী থেকে শুরু করে বিজয়া দশমী পর্যন্ত এই সময়কালকে ‘কল্পারম্ভ’ বলে অভিহিত করা হয়। শুধু তাই নয় একেকটি অনুষ্ঠান ও নিয়মের মধ্য দিয়ে চলে দুর্গা পূজার প্রতিটি দিন আর উপবাস থেকে শুরু করে আরো অন্যান্য আচার অনুষ্ঠান।

দুর্গা পূজার সময় এই কাজগুলি না করলে অজান্তেই পাপ হতে পারে

তো চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক কল্পারম্ভ সম্পর্কে:

কল্পারম্ভ:

এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে অন্তর্নিহিত অর্থ, ‘কল্প’ শব্দের অর্থ হলো ‘সংকল্প’। আরম্ভ শব্দের অর্থ হলো ‘শুরু’, সুতরাং ‘কল্পারম্ভ’ এই সম্পূর্ণ কথাটির অর্থ হল “এমন এক মুহূর্ত যখন সংকল্প নিতে হয় যে, পুজোর কয়দিন নিষ্ঠা সহকারে নিয়মাবলী পালন করতে হবে”।

মহা ষষ্ঠীর সকালে মণ্ডপের এক কোণে ঘট স্থাপন করতে হয়, দেবীর আরাধনায় যে পবিত্র সংকল্প করা হয় ঘট হলো তার সাক্ষী। আর এই সময়কাল থেকেই সমস্ত শুভ কাজের সংকল্প নেওয়া শুরু হয়ে যায়।

এরপর আসে বোধন:

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে মহাষষ্ঠী পড়ে গেলে তার গোধূলি লগ্নে হয় বোধন, বোধন কথার অর্থ হল জাগরণ, মনে করা হয় যে সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়লেই দেবদেবীদের ঘুমাতে যাওয়ার সময় হয়, তাই মহা শক্তি মহামায়া কে জাগ্রত করতে এই বোধন এর আচার অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়।

দুর্গাপূজার দিন এই ৭টি কাজ শাস্ত্র মতে মানা

আমন্ত্রণ ও অধিবাস:

দেবী দুর্গাকে জাগানোর পরের পর্ব হল আমন্ত্রণ ও অধিবাস। এখানে আমন্ত্রণ কথার অর্থ হলো পুজো গ্রহণ করার আবেদন অর্থাৎ দেবীর উদ্দেশ্যে যা উৎসর্গ করা হবে তা যেন তিনি তুষ্ট মনে গ্রহণ করেন, না হলে মানব সমাজে অকল্যাণ হতে পারে।

অন্যদিকে অধিবাস কথার অর্থ হলো বসত করা। লাল সুতো দিয়ে চারটি কঞ্চির মাথা বেঁধে দেওয়া হয়, এটা হল এমন এক বন্দি, অশুভ শক্তি যার বাইরে থাকবে আর ভিতরে থাকবেন মহা শক্তি। অধিবাসে বিল্বপত্র অর্থাৎ বেলপাতা ভীষণভাবে প্রয়োজনীয় আর ২৬ টি জিনিস মায়ের পায়ের ছুঁয়ে পবিত্র করা হয় এই নিয়মের মধ্যে দিয়ে।

দেবী দুর্গা কে সন্তুষ্ট করতে এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখবেন

এরপরে আসে নবপত্রিকা স্নান:

এই নিয়মটি মহা পালন করা হয় সপ্তমীর সকালে এই আচার অনুষ্ঠানটি পালিত হয় এবং মহা ধুমধাম এর সাথে নবপত্রিকা স্নান করা হয় পত্রিকার আক্ষরিক অর্থ হলো নয়টি পাতা।

যদিও বাস্তবের নটি গাছের পাতার সঙ্গে শিকড়ও থাকে। নবপত্রিকা তে থাকে কলা গাছ কচু হলুদ বেল জয়ন্তী দাড়িম অশোক মান ও ধান।

একটি কলা গাছের সঙ্গে অপর আটটি উদ্ভিদের শিকড় ও পাতা বেঁধে দেওয়া হয় অপরাজিতা লতা দিয়ে এই বাঁধনের কাজ করা হয়ে থাকে তারপর লাল পাড় ওয়ালা সাদা শাড়ি জড়িয়ে সেই কলাগাছকে বউ হিসেবে পড়িয়ে ঘুমটা দিয়ে নতুন বধুর আকারে সাজানো হয়।

এরপর সিঁদুর পড়ানো হয় নব পত্রিকার প্রচলিত নাম হলো কলাবউ। আর গ্রাম্য ভাষায় কলা বউ স্নান হিসেবে এই নবপত্রিকা স্নান ভীষণভাবে পরিচিত। ঢাকের তালে সবাই আনন্দে নাচতে নাচতে মহাসপ্তমীর সকালবেলা পবিত্র নদী অথবা পবিত্র কোন সরোবর বা পুকুরে নবপত্রিকা স্নানের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

দূর্গা পূজার সময় এই কাজ গুলি ভুলেও করবেন না, সঠিক পদ্ধতি জানুন

এরপর আসে কুমারী পূজা:

মহা সপ্তমীর পরেই আসে মহা অষ্টমী আর এই দিনে অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজা, যা ছোট কোন বাচ্চা মেয়েকে নববধূর মতো সাজিয়ে পূজা করা হয়।

বিবাহিত কন্যাকে মহা শক্তি রূপে আরাধনা করা হয়। যাকে আমরা কুমারী পূজা নামেই চিনি। কুমারী কে গঙ্গা জলে শুদ্ধ করে লাল শাড়ি পরানো হয়, পায়ে থাকে আলতা, আর অষ্টমীর দিনে এই পূজা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।

বিভিন্ন বয়সের কুমারীকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়, আর দেবী দুর্গার সামনে এই কুমারী মেয়েকে দেবী হিসেবে পূজা অর্চনা করা হয়ে থাকে।

আপনার ভাগ্য ফেরাতে দুর্গাপূজার আগে ঘরে আনুন এই ৫ টি জিনিস

তারপর আসে সন্ধি পূজা:

দুর্গাপূজার খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো এই সন্ধি পূজা, এই সন্ধিপূজা মহা অষ্টমী ও মহা নবমীর সন্ধিক্ষণে হয় বলে এই পূজার নাম হয়েছে ‘সন্ধি পূজা’। মহা অষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট এবং মহানবমীর প্রথম ২৪ মিনিট অর্থাৎ মোট ৪৮ মিনিট ধরে চলে সন্ধি পূজা।

১০৮ টি পদ্মফুল এবং ১০৮ টি মাটির প্রদীপ সন্ধি পূজার ক্ষেত্রে আবশ্যিক বিশেষ সামগ্রী। এছাড়া সন্ধি পূজায় দেবী দুর্গাকে পূজা করা হয় চামুন্ডা রূপে। যখন মহিষাসুরের সঙ্গে দেবী যুদ্ধ করছিলেন সেই সময় চন্ড ও মুন্ড আক্রমণ করেন। তারা ছিলেন মহিষাসুরের দুই সেনাপতি।

এদের দেবী দুর্গা বধ করেছিলেন বলে সেই থেকে দেবীর নাম হয় ‘চামুন্ডা’। চন্ড ও মুন্ডু কে যে সন্ধিক্ষণে বধ করা হয়েছিল, সেই সময় কে স্মরণ করে সন্ধি পূজার আয়োজন করা হয়।

দুর্গাপূজার দিন গুলিতে কোন দিন কোন পোশাক পরবেন? চলুন জানা যাক

এরপর আসে বিজয় দশমী:

বিজয় দশমী, যা সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে, মিষ্টিমুখ করার মধ্য দিয়ে, পালন করা হয় এবং সব থেকে কষ্টের দিন হলো এটি। আনন্দ, হাসি এর সাথে কান্না ও কষ্ট নিয়ে বিদায় জানাতে হয় দেবী দুর্গাকে।

এইভাবেই দুর্গোৎসবের বোধন থেকে শুরু করে সন্ধিপূজা এবং বিজয়া দশমী পর্যন্ত সময়কালকে ‘কল্পারম্ভ’ বলা হয়। সুন্দর কাজের জন্য সুন্দর সংকল্প নেওয়ার এই রীতি ও প্রথা চলে আসছে প্রাচীনকাল থেকে, যা এই পূজার কয়েক দিন মানুষের মনকে করে তোলে শুদ্ধ ও পবিত্র।

অষ্টমীতে পুষ্পাঞ্জলির মধ্যে দিয়ে এবং কুমারী পূজার মাধ্যমে সকলের মনে এক ভক্তির সঞ্চার হয়, যা সকলের জীবনে আশীর্বাদ হিসেবে নেমে আসে। সংকল্প নেওয়ার এই আরম্ভ কাল পূজার কয় দিন শান্তি বজায় রাখার পাশাপাশি জীবনে ও সংসারে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ভরে ওঠে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top