বাল গঙ্গাধর তিলক জীবনী 2023 – ইতিহাস, পরিবার এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে কার্যক্রম

বাল গঙ্গাধর তিলক কোথায় জন্মগ্রহণ করেন? বাল গঙ্গাধর তিলক কিভাবে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলেন? ওনার বাবা-মা কে? ওনার জীবন কেমন ছিল? এছাড়াও বাল গঙ্গাধর তিলকের সম্পর্কে জানা-অজানা তথ্য জানুন (Biography of Bal Gangadhar Tilak in Bengali)।

স্বাধীনতা আন্দোলনে বাল গঙ্গাধর তিলকের নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। কিন্তু এটা তার আসল নাম নয়। তার আসল নাম ছিল বলবন্ত গঙ্গাধর তিলক। লোকমান্য তিলক হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। রত্নগিরি জেলার চিখরগাঁও গ্রামে ব্রাহ্মণ পরিবারে ভারতের মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম মহানায়ক রাজনীতিবিদ এবং পন্ডিত বালগঙ্গাধর তিলকের জন্ম হয়।

বাল গঙ্গাধর তিলক জীবন পরিচয় - Bal Gangadhar Tilak Biography in Bengali
বাল গঙ্গাধর তিলক জীবন পরিচয় – Bal Gangadhar Tilak Biography in Bengali

তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় পন্ডিত এবং ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা। সমাজ সংস্কারক, আইনজীবী এবং স্বাধীনতা কর্মী ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি প্রথম নেতা ছিলেন। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বালগঙ্গাধর তিলককে ভারতীয় অস্থিরতার পিতা বলতেন।

তো চলুন এমন স্বাধীনতা সংগ্রামী, রাজনীতিবিদ, পন্ডিত, লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক এর জীবনী সম্পর্কে জানা যাক:

বাল গঙ্গাধর তিলকের জীবনী:

  • সম্পূর্ণ নাম: বাল গঙ্গাধর তিলক
  • ডাক নাম: লোকমান্য তিলক
  • জন্ম তারিখ: ২৩ শে জুলাই ১৮৫৬ সাল
  • জন্মস্থান: রত্নগিরি, মহারাষ্ট্র
  • পিতার নাম: গঙ্গাধর রামচন্দ্র তিলক
  • জাতীয়তা: তিনি ভারতীয়
  • আন্দোলন: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন
  • প্রধান সংগঠন: ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস
  • ধর্ম: হিন্দু ধর্ম
  • মৃত্যু: ১ লা আগস্ট ১৯২০ সাল

বাল গঙ্গাধর তিলকের জন্ম: 

তিনি ১৮৫৬ সালের ২৩ শে জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম ছিল গঙ্গাধর রামচন্দ্র তিলক এবং তার বাবা ছিলেন একজন আদর্শবাদী শিক্ষক। বাবা শিক্ষকতার মাধ্যমে বেশি টাকা উপার্জন করতে চাইতেন না।

তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষকরা এই দেশের প্রকৃত অভিভাবক, শিক্ষকতার মাধ্যমে উত্তর পুরুষের আবির্ভাব ঘটে। তিনি তার বাবার কাছ থেকে অনেক শিক্ষা অর্জন করেছিলেন।

বাল গঙ্গাধর তিলকের শৈশবকাল: 

তিনি ছোটবেলা থেকে দেশাত্মবোধক চিন্তাভাবনায় মগ্ন থাকতেন। পরাধীন ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের সহ্য করতে পারতেন না। সেই কারণে তিনি খুবই কম বয়সে দেশের স্বাধীনতার জন্য নিজেকে নিযুক্ত করেছিলেন।

বাল গঙ্গাধর তিলক এর শিক্ষা জীবন: 

তার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে বলতে গেলে বালগঙ্গাধর তিলক খুবই ভালো ছাত্র ছিলেন। পড়াশুনার প্রতি তার আগ্রহ ছিল প্রবল। ১৮৭৯ সালে তিনি আইন বিষয়ের ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাল গঙ্গাধর তিলকের স্লোগান: 

বাল গঙ্গাধর তিলক বিশ্বাস করতেন যে, অহিংসা নয় সহিংস পন্থাতে ইংরেজদের ভারতবর্ষ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিতাড়িত করা সম্ভব হবে। বাল গঙ্গাধর তিলক এর আদর্শ ছিল জঙ্গিবাদ, কোমলতা নয়। তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় নেতা, যিনি স্লোগান দিয়েছিলেন, “স্বাধীনতা হলো আমার জন্মসূত্রে প্রাপ্য বিষয় এবং আমাকে তা অর্জন করতেই হবে”।

বাল গঙ্গাধর তিলকের পত্রিকা: 

বাল গঙ্গাধর তিলক বরাবরই রাজনৈতিক দিক থেকে খুবই সচেতন ছিলেন। সব সময়ের জন্য ভারতবর্ষের মুক্তির জন্য তিনি চিন্তা ভাবনা করতেন। কি করলে, কোন পথে এগোলে ভারত খুবই সহজে এবং খুবই তাড়াতাড়ি স্বাধীনতা লাভ করতে পারে।

জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার চেতনায় দেশবাসীকে উজ্জীবিত করার জন্য বাল গঙ্গাধর তিলক একদিকে মারাঠি ভাষায় কেশারী এবং ইংরেজি ভাষায় মারাঠা পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। যে পত্রিকা দুটি স্বাধীনতা আন্দোলনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

বাল গঙ্গাধর তিলকের গীতা রহস্য: 

যেহেতু তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, এবং সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকার জন্য আপোসহীন নেতা ছিলেন তিনি।

সেই কারণে তাকে অনেকবার জেলও খাটতে হয়েছে, ১৯০৮ সনে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করার জন্য বাল গঙ্গাধর তিলককে ৬ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং বার্মার মান্দালয় জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জেলে বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি রচনা করেন শ্রীমৎ ভাগবত গীতার বিখ্যাত ভাষ্যগীতা রহস্য”।

বাল গঙ্গাধর তিলক এর লেখা বই: 

বাল গঙ্গাধর তিলক ভারতীয় ইতিহাস এবং সংস্কৃতির উপর একজন গভীর জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। সেটা ধারণা করাই যায়।

বালগঙ্গাধর তিলক বেদের উপর ইংরেজি ভাষায় একটি বইও লিখেছিলেন। যা কিনা বাল গঙ্গাধর তিলক কে প্রথমে ইংল্যান্ডে এবং পরবর্তীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট পরিচিতি প্রদান করে।

বঙ্গ ভঙ্গের বিরোধিতা করা বালগঙ্গাধর তিলক:

স্বাধীনতা আন্দোলনে তার ভূমিকা কতখানি তা আর নতুন করে বলার কিছু নেই। ১৯০৫ সালের লর্ড কার্জনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বঙ্গভঙ্গ এর তিনি ঘোরতর বিরোধি ছিলেন। আজীবন জাতীয়তাবাদের একজন বলিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন তিনি। জার্মানির একজন বিখ্যাত পন্ডিত ম্যাক্স মুলার তার জ্ঞানের গভীরতায় বিশেষভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন।

১৯০৮ সালে রাজদ্রোহিতার অভিযোগে বালগঙ্গাধর তিলককে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। বিচারালয়ে বাল গঙ্গাধর তিলক আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য একটা ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন, যা একটানা চারদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল।

বাল গঙ্গাধর তিলক এর “হোম রুল লীগ আন্দোলন”: 

একজন বিপ্লবী হিসেবে তিনি অনেকবারই গ্রেফতার হয়েছেন। তারপর তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ১৯১৬ সালে অ্যানি বেসান্তের সঙ্গে হোম রুল লীগ আন্দোলন শুরু করেন। তবে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে বালগঙ্গাধর তিলক সেটা প্রত্যাহারও করে নেন। এছাড়া তিনি ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সুবিধার জন্য কংগ্রেসকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিলেন এবং শক্তিশালী একটা সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন কংগ্রেসকে।

বাল গঙ্গাধর তিলক এর মৃত্যু: 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা এই লোকমান্য তিলক ১৯২০ সালের ১ লা আগস্ট ৬৪ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সুবিখ্যাত মনীষী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব লোকমান্য তিলক এই পৃথিবীর মায়া ছেড়ে অমৃত লোকে যাত্রা করেন। তার মৃত্যুতে ভারতবাসী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।

দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং সেই দেশের জন্যই অগ্রণী ভূমিকা পালন করা, সবকিছুর মধ্যে দিয়ে বাল গঙ্গাধর তিলক প্রতিটি ভারতবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তিনি চাইলে তার শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে সুস্থ, স্বাভাবিক চিন্তা মুক্ত জীবন যাপন করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তা না করে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং নিজের বুদ্ধিমত্তার বলে সেই আন্দোলনে অনেক কাজও করেছেন।

ভারতবর্ষের মুক্তির জন্য তিনি সর্বদাই চিন্তা করতেন। এমন একজন ব্যক্তিত্ব এর মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক। আর তাইতো তিনি লোকমান্য তিলক” হিসেবে সমস্ত ভারতবাসীর কাছে অমর হয়ে রয়েছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top