লক্ষ্মী-নারায়ণের কৃপা দৃষ্টি পেতে বৃহস্পতিবারে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম্পদের দেবী হিসেবে দেবী লক্ষ্মী কে বিশেষভাবে বাড়িতে অধিষ্ঠিত করে পূজা-অর্চনা করা হয় সারা বছর ধরে। সংসারে ধন-সম্পদের আগমন ঘটাতে এই দেবীর পূজা করা হয় বলে জানা যায়, কখনো কখনো দেবী লক্ষ্মীর সাথে সাথে নারায়ণেরও পূজা করা হয়।

হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে বৃহস্পতিবার যে শুধু লক্ষ্মী বার তা কিন্তু নয়। এই দিনে নারায়নেরও পূজা করা হয়। বৃহস্পতি বারে তাই লক্ষ্মী-নারায়ণ এর একসঙ্গে পূজা করার বিধান রয়েছে শাস্ত্রে।

এমনটা বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে যে ব্যক্তি ভগবান বিষ্ণুর পূজা করেন এবং উপবাস পালন করেন, তার সমস্ত মনের ইচ্ছা খুব তাড়াতাড়ি পূরণ হয়। এর সাথে সাথে গৃহে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি বজায় থাকে সারা জীবন এবং ধন-সম্পদ লাভ হয় জীবনে।

লক্ষ্মী-নারায়ণের কৃপা দৃষ্টি পেতে বৃহস্পতিবারে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি
লক্ষ্মী-নারায়ণের কৃপা দৃষ্টি পেতে বৃহস্পতিবারে মেনে চলুন এই নিয়মগুলি

কোন গৃহস্থ বাড়ির সদস্যরা চাইবেন না, জীবনে অর্থ ভাগ্য খুব খারাপ হোক, তাই অর্থ ভাগ্য বদলে ফেলতে বৃহস্পতিবারে বেশ কিছু নিয়ম পালন করার সাথে সাথে দেবী লক্ষ্মী ও নারায়ণের পূজা করার কথা বলা হয়েছে। সেই নিয়ম মেনে চললে লাভের মুখ দেখতে পারেন আপনিও।

বৃহস্পতিবার হলেই যেন প্রতিটি বাড়িতে একটা ছোটখাট উৎসবের আয়োজন শুরু হয়ে যায়। সারা ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ঠাকুর ঘরও সুন্দর করে সাজানো হয় এবং মা লক্ষীকে আরাধনা করার জন্য ফুল, ফলের যোগাড় করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাড়ির গৃহিণীরা।

বৃহস্পতিবার মা লক্ষ্মী ভগবান বিষ্ণুর স্ত্রী এবং বিশেষ দিনে তাদের উভয়ের পূজা করলে মা লক্ষ্মী খুশি হন, আর আর্থিক অসুবিধা থেকে মুক্তি পান সেই বাড়ির সকল সদস্যরা। গৃহে অর্থের আগমন ঘটে।

এই বিশেষ দিনে বিশেষ মন্ত্র:

এই বিশেষ দিনে প্রতিটি বৃহস্পতিবার ভগবান বিষ্ণুর মূর্তির সামনে ঘি এর প্রদীপ জ্বালাতে হবে। সাথে সাথে বিষ্ণুর পূজা করার বিধান রয়েছে যেহেতু তাই অর্থ ভাগ্য ফেরাতে এটি আপনাকে নিয়ম করে পালন করতে হবে।

এই প্রতিকার করলে নারায়ণ ও লক্ষ্মীর আশীর্বাদ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার ব্রহ্মমুহূর্তে স্নান করার পর “ওম ব্রি বৃহস্পতে নমঃ” এই মন্ত্রটি উচ্চারণ করলে মানুষের জীবনে কখনো অর্থের অভাব হয় না বলেই মনে করা হয়।

জীবনের বাধা কাটিয়ে উঠতে:

প্রতিটি মানুষের জীবনে কর্ম জীবন এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে। জীবিকা নির্বাহের জন্য সকলেই কোন না কোন কর্মজীবনকে বেছে নিয়েছেন এবং সেই কর্মজীবনে যদি কোন ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়, তাহলে বৃহস্পতিবার বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ময়দা বা গুড় অবশ্যই গরুকে খাওয়ানোর এই নিয়মটি পালন করুন। এই প্রতিকার করলে মানুষ তার সব কাজে সফলতা পাবেন এমন কথা বলা হয় শাস্ত্র অনুসারে।

লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজা: 

যেহেতু প্রতি বৃহস্পতিবার দেবী লক্ষ্মীর সাথে সাথে বিষ্ণুরও পূজা করা খুবই শুভ বলে মনে করা হয। চাকরি সংক্রান্ত সমস্যায় অস্থির থাকেন অনেক মানুষ। সেক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার মন্দিরে হলুদ রঙের জিনিস দান করুন, এটি শুভ ফল দেবে।

কথিত আছে যে ভগবান বিষ্ণু হলুদ বস্ত্র খুব পছন্দ করেন। তাই এই দিনে হলুদ রঙের পোশাক পরা শুভ বলে মনে করা হয়। এই শুভদিনে ব্রাহ্মণদের ছোলা, ডাল, ফল ইত্যাদি দান করার চেষ্টা করুন।

প্রতি বৃহস্পতিবার যেমন ভাবে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করে থাকেন তেমন ভাবেই নারায়ণের আরাধনা করতে একেবারেই ভুলবেন না। এতে তাদের কৃপাদৃষ্টি পেতে পারবেন খুব সহজে।

ঘি এর প্রদীপ, একটি পাত্রে চাল, ধান, হলুদ রঙের ফুল, লক্ষ্মীর ঝাঁপি, সিঁদুর কৌটো, সবকিছুই এই দিনে পূজার ঘরে পূজার ক্ষেত্রে রাখাটা শুভ ফলদায়ক।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:

আমরা সকলেই কম বেশি জানি যে, দেবী লক্ষ্মী সেই বাড়িতেই অধিষ্ঠিত হন যে বাড়িতে চারিদিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে এবং যে বাড়িতে কোলাহল খুবই কম হয়। তিনি শান্ত প্রকৃতির আর খুবই চঞ্চলা, তাই সম্পদের দেবী লক্ষ্মীকে ঘরে অধিষ্ঠিত করে রাখার জন্য এগুলি আপনাকে অবশ্যই পালন করতে হবে।

সারা সপ্তাহ ধরে এই দিনের অপেক্ষা করে থাকেন অনেকেই যেমন, তেমনি বাড়ির আনাচে কানাচে পড়ে থাকা নোংরা আবর্জনা সেগুলি শীঘ্রই সরিয়ে ফেলতে হবে। তার পরেই বৃহস্পতিবার লক্ষী-নারায়ণের পূজা সম্পন্ন করতে হবে।

ব্রত ও উপবাস:

বৃহস্পতিবার অনেকেই ব্রত পালন করেন এবং উপবাসও রাখেন। তবে প্রতি বৃহস্পতি বার যদি এমনটা সম্ভব না হয়ে ওঠে, তাহলে বাড়ির সকল সদস্যরা প্রতি সপ্তাহের একটা দিন করে অন্তত উপবাস পালন করে এই পূজায় প্রধান অংশগ্রহণকারী হিসেবে যোগদান করবেন।

লক্ষ্মীর পাঁচালী:

কোজাগরি লক্ষ্মী পূজায় যে শুধুমাত্র লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করতে হয় তা কিন্তু নয়। প্রতি বৃহস্পতিবার যেহেতু আপনি লক্ষী-নারায়ণের পূজা করছেন, ব্রত পালন করছেন, তাই এদিনও ভক্তি ভরে লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করতে হবে।

সংসারে অর্থ কষ্ট দূর করতে এবং অর্থের আগমন ঘটাতে লক্ষ্মীর পাঁচালী পাঠ করা একটি শুভ কাজ বলে মনে করা হয়। ভক্তি ও নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এই দিন পূজা অর্চনা করার পরে প্রসাদ বিতরণ করুন সকলের মধ্যে।

জীবনের সকল সমস্যার সমাধান করতে মনে মনে ব্রত পালন করুন, আর ঈশ্বরের কাছে এই সমস্ত সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য আশীর্বাদ প্রার্থনা করুন।

প্রতি বৃহস্পতি বার যদি এইভাবে লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজা করা যায়, ব্রত ও উপবাস পালন করে, তাহলে খুব শীঘ্রই সংসার থেকে দূর হয়ে যাবে সকল দুঃখ-কষ্ট, অর্থের অভাব, তার পরিবর্তে জীবনে আসবে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি আর জীবনের সকল সমস্যা দূর হতে থাকবে ধীরে ধীরে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top