Maha Ashtami 2023: মহা অষ্টমীর সন্ধিপূজায় লাগে ১০৮ টি লাল পদ্ম ও ১০৮ টি প্রদীপ, কেন জানেন?

শরতের আভাস পেতে না পেতেই চারিদিকে কাশফুলের মেলা যেন মনকে আগে থেকেই জানান দেয় দুর্গাপূজা এসে গিয়েছে। আর এই দুর্গাপূজা সমস্ত বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বী দের কাছে এক বিশাল বড় আনন্দের খবর। মহালয়া থেকে শুরু হয়ে যায় দেবীপক্ষের এই শুভ দিন গুলির আগমন বার্তা।

প্রতিদিন যাওয়ার সাথে সাথে সকলের কাছে এই পুজো এগিয়ে আসে এক পা দু পা করে। আশ্বিনের শুক্লা অষ্টমীর বিশেষ মাহেন্দ্রক্ষনে দেবী দুর্গার সন্ধিপূজা হয় বলে আমরা তো সকলেই জানি।

তবে এই সন্ধিপূজায় বিশেষ নিয়ম পালন করার পাশাপাশি ১০৮ টি লাল পদ্মফুল এবং সাথে ১০৮ টি প্রদীপ প্রয়োজন পড়ে। এই নিয়মগুলো তো পালন করা হয় ঠিকই, তবে কেন এই নিয়ম পালন করা হয়, কেন ‘১০৮’ টি করেই সবকিছু প্রয়োজন পড়ে সে বিষয়ে হয়তো অনেকেই জানেন না। ১০৮ টি লাল পদ্মফুল উৎসর্গ করা হয় দেবীর পায়ে, জ্বলে ওঠে ১০৮ টি প্রদীপ, অষ্টমী আর নবমী এই দুই তিথির শুভ সন্ধিক্ষণে যে পূজা করা হয় তাকে “সন্ধিপূজা” বলা হয়।

মহা অষ্টমীর সন্ধিপূজায় লাগে ১০৮ টি লাল পদ্ম ও ১০৮ টি প্রদীপ, কেন জানেন?
মহা অষ্টমীর সন্ধিপূজায় লাগে ১০৮ টি লাল পদ্ম ও ১০৮ টি প্রদীপ, কেন জানেন?

সন্ধি পূজার এই শুভক্ষণে চারিদিকে ঢাকের আওয়াজ তার সাথে সাথে পুরোহিতের মন্ত্র উচ্চারণ সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। আর পূজার পরিবেশকে আরো বেশি মুখরিত করে তোলে।

রাতের হিমেল বাতাস, বাজি ফোটানোর আওয়াজ, শঙ্খ ধ্বনি, ঢাকের বাদ্যি দিয়ে, উলুধ্বনি, ঘন্টা সবকিছু মিলিয়ে সবদিক যেন ভাসিয়ে নিয়ে যায় চারিদিকের পরিবেশ থেকে শুরু করে সকল মানুষের মন। মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথে ১০৮ টি প্রদীপের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে মায়ের মুখমণ্ডল।

শুভ অষ্টমী শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

সেই মুখ দেখতে যেন এতটাই মায়াবী লাগে যে শুধুমাত্র চেয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। অষ্টমী তিথির বিদায় আর নবমীর আগমনে এই সন্ধিপূজা হয় অর্থাৎ অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট এবং নবমী তিথির শুরুর ২৪ মিনিট, এই মোট ৪৮ মিনিট ধরে চলে সন্ধি পূজার অনুষ্ঠান। কাহিনী অনুসারে জানা যায় এই সন্ধিক্ষণে দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে ত্রিশূল বিদ্ধ করেছিলেন। আবার অন্য এক দিকে দেখা যায় শ্রীরামচন্দ্র এই সময়ে রাবণের মুন্ডচ্ছেদ করেছিলেন।

১০৮ টির (১০৮ টি লাল পদ্মফুল ১০৮ টি প্রদীপ) তাৎপর্য:

তো চলুন তাহলে জানা যাক এই ১০৮ টির (১০৮ টি লাল পদ্মফুল ১০৮ টি প্রদীপ) তাৎপর্য:

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে জানা যায় দেবী দুর্গা এই দুই তিথির মিলনক্ষনেই আবির্ভূত হয়েছিলেন দেবী চামুণ্ডা রূপে। পুরান মতে চন্ড এবং মুন্ড নামক দুই ভয়ানক অসুরকে তিনি এই সন্ধিক্ষণে বধ করেছিলেন। অন্যদিকে রাক্ষস রাজ রাবণকে বধ করার জন্য আশ্বিন মাসে রামচন্দ্রের অকাল বোধনের যে উল্লেখ পাওয়া যায় কৃত্তিবাসী রামায়ণে, সেখানেও রামচন্দ্র সন্ধি পূজা সমাপন কালে দেবীর চরণে ১০৮ টি নীল পদ্ম নিবেদন করার আশায় হনুমানকে দেবীদহ থেকে ১০৮ টি নীল পদ্মফুল তুলে আনতে বলেন।

কিন্তু দেবীদহে একটি পদ্মফুল কম ছিল, তার কারণে হিসেবে দীর্ঘদিন অসুর নিধন যজ্ঞে মা দুর্গার ক্ষত-বিক্ষত দেহের অসহ্য জ্বালা দেখে মহাদেব কাতর হন। মায়ের সারা শরীরে ১০৮ টি ক্ষতস্থান সৃষ্টি হয়েছিল। তাই মহাদেব দেবী দুর্গাকে দেবী দহে স্নান করতে বললেন সেই জ্বালা জুড়ানোর জন্য। সেই দেবীদহে মায়ের অবতরণে ১০৭ টি ক্ষত থেকে সৃষ্টি হয়েছিল ১০৭ টি পদ্মফুল, তবে আরো একটি ক্ষতস্থান রয়েই যায়। সেই ক্ষতস্থানের জ্বালায় দেবী দুর্গা কাতর হয়ে পড়েন, তখন মহাদেব দুর্গার এই জ্বালা সহ্য করতে না পারায় তাঁর চোখ থেকে এক ফোটা অশ্রু নিক্ষিপ্ত হয় মায়ের ১০৮ তম ক্ষতস্থানের উপরে।

অষ্টমীর পূজা বিধি কি? অস্ত্রের পূজা কেন হয়? জেনে নিন

দেবী দহে স্নান কালে সেই অশ্রুসিক্ত ক্ষতটির থেকে যে পদ্মফুলটি জন্ম নিয়েছিল সেটি মা নিজেই নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। কারণ স্বামীর অশ্রুসিক্ত পদ্ম ফুলটি কেমন করে তিনি চরণে নেবেন সেটাইতো তাঁর কাছে খারাপ লাগার বিষয়। তাই নিজের কাছে তিনি গোপনে রাখেন। আর সেই থেকেই এই ১০৮ টি পদ্মফুল এবং ১০৮ টি প্রদীপ জ্বালানোর প্রথা এবং রীতি চলে আসছে। বলা যেতে পারে এই ১০৮ টির সাথে জড়িত রয়েছে দেবী দুর্গার ক্ষতস্থানের জ্বালা যন্ত্রণা নিরাময় হওয়ার বিষয়টি।

শ্রীরাম চন্দ্রের সাথে ১০৮ টি পদ্ম ফুলের ঘটনা:

আগের ঘটনা থেকে আমরা জানলাম যে দেবী দহে ১০৭ টি পদ্মফুল ছিল, কিন্তু একটি পদ্মফুল মহাদেবের চোখের অশ্রু থেকে উৎপন্ন হয়েছিল বলে দেবী দুর্গা নিজেই সেটি হরণ করে রেখে দিয়েছিলেন। তবে অকাল বোধনের সময় যখন হনুমান দেবীদহ থেকে ১০৭ টি পদ্মফুল তুলে আনেন সেখানে একটি পদ্মফুল স্বাভাবিকভাবেই কম পড়ে, তাই কোনো রকম উপায় না পেয়ে দেবীকে কিভাবে সন্তুষ্ট করবেন সেই চিন্তায় শ্রী রামচন্দ্র ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তবে তিনি একটি উপায় খুঁজে পান, সেটি হল তাঁর দুটি নীল নয়ন এর থেকে একটি নয়ন যা কমল হিসাবে তিনি দেবীকে উৎসর্গ করতে চেয়েছিলেন।

তাই নিজের তীর ধনুক দিয়ে তীরের আগায় নিজের একটি নীল নয়ন তুলে দেবীকে উৎসর্গ করতে গিয়েছিলেন। তখন দেবী শ্রী রামচন্দ্রের এই ভক্তিতে এবং ত্যাগ স্বীকারে সন্তুষ্ট হয়ে চোখ নিবেদন করতে বাধা দেন। আর তিনি রাবণের সাথে যুদ্ধে জয় করার আশীর্বাদও দেন।

দুর্গাপূজা করুন এই নিয়মে আপনার উপর প্রসন্ন হবেন দুর্গতিনাশিনী

সেই একটি পদ্মফুল নিজের কাছে যে রেখেছিলেন সেটিও রামচন্দ্র কে জানিয়ে বলেন যে তিনি পরীক্ষা করছিলেন। কাহিনী অনুসারে জানা যায় মহা ষষ্ঠীর দিন রামচন্দ্র পূজা শুরু করেন, অষ্টমী এবং নবমী তিথির মাঝে রামের অস্ত্র প্রবেশ করে এবং দশমীর দিন রাবনের বিনাশ হয়।

সন্ধি পূজার এই মাহেন্দ্রক্ষণে কেউ যদি বলি দেন, কেউ সিঁদুর সিক্ত এক মুঠো মাসকলাই বলি দেন, সবকিছুই কিন্তু প্রতীকী হিসেবে বলি দেওয়া হয়, সর্বকালের সর্বক্ষণের দুষ্টের দমন হয় দেবীর মাধ্যমে। ঢাকের বাদ্যি বেজে ওঠে যুদ্ধ জয়ের জন্য।

১০৮ টি প্রদীপের আলোক মালায় উদ্ভাসিত হয়ে যাক আমাদের জীবনের সমস্ত অন্ধকার আনাচ-কানাচ। দুষ্কৃতীদের বিনাশিনী এবং সাধুদের পরিত্রাণকারী মা দুর্গা তিনি সকল ভক্তদের মনের ইচ্ছা পূরণ করার পাশাপাশি এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেন আর আনন্দ উৎসবের মধ্যে দিয়ে এই কয়দিন সকলের মনকে আনন্দে ভাসিয়ে নিয়ে যান। জীবনের সমস্ত বাধা বিপত্তি কাটিয়ে আশীর্বাদে পরিপূর্ণ করতে তিনি সর্বদাই আশীর্বাদের হাত ভক্তদের মাথায় রাখেন।

অষ্টমীতে পূজার সঠিক বিধি ও অঞ্জলি সম্পর্কে জানা আছে কি?

সন্ধি পূজায় আরো যে গুলি নিবেদন করা হয়:

সন্ধি পূজার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রীতি হল মাকে ১০৮ টি পদ্মফুল এবং ১০৮ টি মাটির প্রদীপ নিবেদন করা। এছাড়াও মা দুর্গাকে নিবেদন করা হয় গোটা একটি ফল (ফল লাল রঙের হওয়াটা বাঞ্ছনীয়), এর সাথে লাল জবাফুল, শাড়ি, অলংকার, চাল (যদি কোন ভক্ত নিবেদন করতে চান তাহলে করতে পারেন), এর সাথে সাথে বেল পাতা, পুজোর উদ্যোক্তারা নিজের মতো নৈবেদ্য সাজিয়ে থাকেন। তবে ১০৮ টি পদ্মফুল এবং ১০৮ টি প্রদীপ জ্বালানোর রীতির কোন নড়চড় হয় না কোনোখানেই।

শুভ সন্ধি পূজা শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস

⭐ এছাড়া এই ১০৮ টি পদ্মফুল নিবেদন করা হলো ভক্তির স্বরূপ, শ্রী রামচন্দ্র যেভাবে পরম বিশ্বাসে, ভক্তি প্রদর্শনে নিজের চক্ষু বিসর্জন দিতে যাচ্ছিলেন সেভাবেই আমাদের লক্ষ্যে অবিচল ও বিশ্বাসে নিবেদিত হতে বলেছেন দেবী দুর্গা।

তবেই মিলবে সাফল্য এবং মনের সকল ইচ্ছা পূর্ণ হবে, কেটে যাবে জীবনের সমস্ত বাধা বিপদ। তাই প্রতি বছর ১০৮ টি পদ্মফুল দেওয়া রীতি প্রচলিত রয়েছে, আর তা চলে আসছে প্রাচীনকাল থেকে আজও পর্যন্ত যা ভবিষ্যতেও চলবে এই নিয়মের কোন নড়চড় হবে না।

আপনিও যদি মায়ের কাছে কোন মনের কথা জানাতে চান এবং কোন স্বপ্ন পূরণের কথা জানাতে চান তাহলে ১০৮ টি পদ্মফুল নিবেদন করে আপনিও ভক্তির সাথে পূজা করতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top